এজলাসে হাসতে হাসতে ঢুকে কাঁদতে কাঁদতে বের হলেন সিরাজ

ফেনীর আদালত প্রাঙ্গণে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা
ফেনীর আদালত প্রাঙ্গণে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। ছবি-সংগৃহীত

বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে বেশ হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। রায় ঘোষণার পর অবশ্য তাঁকে কাঁদতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, আজ সকালে অধ্যক্ষ সিরাজসহ এই মামলার ১৬ আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। প্রিজনভ্যান থেকে নামার সময় তিনি বেশ হাসিখুশি ছিলেন। হাসতে হাসতে তিনি আদালতের এজলাসে যান। রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তিনি খোশমেজাজে ছিলেন।

তবে আদালতের রায় শুনে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বারবার নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। রায়ের পর যখন তিনিসহ সব আসামিকে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়, তখনো তাঁদেরকে কাঁদতে দেখা গেছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এদিকে রায় ঘোষণার সংবাদ শুনে কোর্ট চত্বরে আসামির স্বজনরাও আহাজারি শুরু করেন। আদালত প্রাঙ্গণে আসামি হাফেজ আবদুল কাদেরের বাবা আবুল কাশেম খান, জাবেদ হোসেনের ভাই জাহেদ হোসেন, নুর উদ্দিনের মা রাহেলা বেগম, আবদুর রহিম শরীফের মা নুর নাহার ও ইফতেখার উদ্দিন রানার বাবা জামাল উদ্দিন প্রকাশ্যে এ রায়ের বিরোধিতা করেন। তারা নুসরাত হত্যা মামলাটি মিথ্যা ও তাদের সন্তানদের বিনা দোষে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এ সময় আসামিদের স্বজনরা উচ্চ স্বরে কাঁদতে থাকেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয় নুসরাতকে। এ সময় তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়।

আজ সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামিদের এজলাসে আনা হয়। ৩ মিনিটের মধ্যে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। বেলা ১১টা ৮ মিনিটে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ রায় পড়তে শুরু করেন। বিচারক অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায় পড়তে বিচারক সময় নেন ১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। আর এরপরই অধ্যক্ষ সিরাজের মুখে হাসির বদলে কান্না দেখা দেয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে