দিগন্তরেখায় অশনিসংকেত

আবদুল মান্নান

আবদুল মান্নান
আবদুল মান্নান। ফাইল ছবি

দীর্ঘ ২১ বছর বিরতির পর ১৯৯৬ সালে যখন প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন আমি একাধিক জাতীয় দৈনিকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে লিখেছিলাম, শেখ হাসিনার কষ্টার্জিত এই অর্জন নষ্ট করে দিতে পারে কিছু উচ্চাভিলাষী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী দুর্বৃত্ত এবং এটিও লিখেছিলাম, এসব মৌসুমি আওয়ামী লীগারের কারণে শুধু আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর দুটি লেখার শিরোনাম ছিল, ‘কয়েকজন চাটুকারই সব বরবাদ করে দিতে পারে’ (৮ জানুয়ারি ২০০৯), আরেকটির শিরোনাম ছিল, ‘শেখ হাসিনা হাঁটছেন টান টান দড়ির ওপর দিয়ে’ (১৫ নভেম্বর ২০০৯)। এসব সতর্কবাণী বা শঙ্কার কথা বলেছিলাম কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, করেছিলাম এ কারণেই যে আমার কাছে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের হাতে এই মুহূর্তে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ নিরাপদ বলে মনে হয়নি, এখনো তা মনে হয় না।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যা অর্জন করেছে, তা কম নয়। বিশেষ করে পার্বত্য শান্তিচুক্তি, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারকাজ শুরু। মনে রাখতে হবে, ওই সময় সরকারের প্রশাসনযন্ত্র অনেকটাই আওয়ামী লীগবিরোধী মতবাদে বিশ্বাসী। দীর্ঘ ২১ বছরে যাঁরা প্রশাসনে গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিল বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ঘরানার। তখন সরকার পরিচালনায় একজন অনভিজ্ঞ শেখ হাসিনাকে তাঁদের নিয়েই সরকার পরিচালনা করতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিলেন, যাঁরা দিনে সচিবালয় শেষে রাতে খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে দিনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের একটা ফিরিস্তি তুলে ধরতেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তাঁদের অনেকেই খালেদা জিয়ার বিজয় নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, রাত জেগে নির্বাচন কমিশন পাহারা দিয়েছেন আর খালেদা জিয়া এই নির্বাচনে বিজয় লাভ করার পর তাঁদের প্রত্যাশিত পদ-পদবিতে পদায়িত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতির তেমন একটা পরিবর্তন হয়েছে, তা কি বলা যাবে? গত ২০ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিক প্রথম পৃষ্ঠায় প্রতিবেদন করেছে, ‘প্রশাসনে এখনো বিএনপি-জামায়াতের ভূত’ শিরোনামে। কোন কোন মন্ত্রণালয়ে এই ভূতদের বেশি পদায়ন হয়েছে তার কিছুটা উল্লেখও করেছে পত্রিকাটি। প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা কোনো কল্পকাহিনি নয়। খোঁজ নিলে দেখা যাবে বাস্তবতা আরো অনেক বেশি গভীরে।

universel cardiac hospital

স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখনই দলটি ক্ষমতায় এসেছে তখনই তাকে শুধু বহিঃশত্রু মোকাবেলা করতে হয়নি, করতে হয়েছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অন্দর মহলের শত্রুগোষ্ঠীকে। বঙ্গবন্ধুর বড় দুর্বলতা ছিল আকাশের মতো তাঁর উদারতা আর বাঙালির জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা। এ কারণেই তিনি শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করেছিলেন। অন্দর মহলের মানুষ যখন শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন বিপদটা সবচেয়ে বেশি হয়। খন্দকার মোশতাক থেকে জিয়া, ডাকসাইটে আমলা মাহবুব-উল-আলম চাষী থেকে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর—সবাইকেই তিনি বিশ্বাস করেছিলেন আপনজন বা সন্তানের মতো, তাঁদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বুঝতে পারেননি তাঁদের নেতৃত্বেই তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ একাধিকবার বঙ্গবন্ধুকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শুধু সাবধানই করেনি, কোথায় কোথায় এই ষড়যন্ত্রকারীরা কয়টি বৈঠক করেছেন, সেই বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন তার বিস্তারিত তালিকাও তারা বঙ্গবন্ধুকে হস্তান্তর করেছিল। বঙ্গবন্ধুর সতর্ক না হওয়ার মূল্য শুধু পরিবারের দুই বেঁচে যাওয়া সদস্য শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানাকেই দিতে হয়নি, পুরো জাতিকে দিতে হয়েছে পরবর্তী ২১ বছর।

১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করার জন্য। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। প্রথমে তাঁকে আমি সমাবর্তনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালে তিনি কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। কারণ আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্য সব ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড সেখানে নিষিদ্ধ ছিল। সেই সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার অর্থ ছিল নিজের মৃত্যু পরোয়ানায় নিজে সই করা। বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন আমাকে ডেকে দায়িত্ব নেওয়ার কথাটা বলেছিলেন, দায়িত্ব নিলে নানা রকম ঝুঁকি জেনেও তখন আমি ‘না’ করতে পারিনি। আমার সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার আমার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে, গাড়িতে ব্রাশফায়ারের পরিকল্পনাসহ বাড়িতে বোমা হামলা হয়। তার পরও দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। ক্যাম্পাস সব ছাত্র-ছাত্রীর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন নিরাপদ। তিনি নির্দ্বিধায় যেতে পারেন। তখন তাঁর মুখ্য সচিব ছিলেন মাহমুদ আহম্মদ রাজা চৌধুরী। তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন। জানতে চাইলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিরাপদ কি না। তিনি বললেন, যদি উপাচার্য আর সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলে তাঁর যাওয়া নিরাপদ, তাহলে তিনি যেতে পারেন। এসেছিলেন তিনি এক আনন্দঘন পরিবেশে। সাধারণত প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেলে সবাই তাঁদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে একটা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। আমার বক্তৃতা শেষ হলে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য চাহিদার তালিকা তো বেশ দীর্ঘ। বরাদ্দ দিলে চাঁদাবাজদের উৎপাতে তা কি কাজে লাগাতে পারবেন? জোরালো কণ্ঠে বলেছিলাম বরাদ্দ দিলে পারব। ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কোনো চাঁদাবাজের উৎপাত ছাড়াই সেই বরাদ্দের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে খরচ হয়েছিল। এখন তো চাঁদাবাজ আর ধান্দাবাজরা খোদ আওয়ামী লীগকেই খেয়ে ফেলার উপক্রম করেছে। বলা বাহুল্য, এরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সুদিনে অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগার, যাদের আনুগত্য আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু বা তাঁর কন্যার প্রতি নয়, নিরঙ্কুশ আনুগত্য অর্থ-সম্পদ আর কালো ধান্দার ওপর।

শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দিয়ে নিজের দল থেকেই তা শুরু করেছেন। যারা এযাবৎ এই শুদ্ধি অভিযানের আওতায় এসেছে, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এবং রাতারাতি রাস্তা থেকে রাজপ্রাসাদে গিয়ে উঠেছে। আর যাঁরা আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, পুলিশের মার খেয়েছেন, জেল খেটেছেন, তাঁদের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ অবস্থায় কিভাবে পৌঁছাল বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলটি? সোজা উত্তর, বঙ্গবন্ধুকন্যা সরল বিশ্বাসে যাদের দলের বা সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকেই সেই দায়িত্বের উপযুক্ত ছিল না, তারা পদকে ওপরে উঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে, নিজের আখের গুছিয়েছে। নিজে ওপরের পদে থেকে নিচের পদ নিলামে তুলেছে। যে মানুষের রিকশা ভাড়ার টাকা ছিল না, সে একাধিক গাড়ির মালিক বনে গিয়েছে, কথায় কথায় প্রমোদভ্রমণে যায় লন্ডন, নিউ ইয়র্ক আর উইকেন্ড কাটাতে ভারত বা সিঙ্গাপুর। সেদিন ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে একটি জাতীয় দৈনিক খবর দিয়েছে, গত ১৫ মাসে শুধু ভারতে গিয়েছে ২৯ লাখ বাংলাদেশি। সবাই কি প্রয়োজনে গিয়েছে? বলা যেতে পারে, এই শুদ্ধি অভিযান এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। বলতে হয় যাদের ধরা হয়েছে, তারা চুনোপুঁটি। রাঘব বোয়ালদের ধরা হলে তখন বোঝা যাবে এই দুর্বৃত্তদের শাখা-প্রশাখা কত দূর বিস্তৃত।

বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে এই দুর্বৃত্তদের নিয়ে এতই বিরক্ত ছিলেন যে তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায় ক্ষোভের সঙ্গে তাদের কথা বেশ জোরালোভাবে বলতেন এবং সর্বশেষ অনন্যোপায় হয়ে তিনি তাদের দমনে সেনা ও রক্ষীবাহিনী ব্যবহার করতে বাধ্য হন। ২৩ জন সংসদ সদস্যের পদ বাতিল ঘোষিত হয়। নূরুল ইসলাম মঞ্জুরকে তাঁর মন্ত্রিত্বের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি বাকশাল নামের একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে বাধ্য হন, যেখানে তিনি আশা করেছিলেন সব দেশপ্রেমিক পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের সদস্যরা সদস্য হবেন এবং দেশ গঠনে তাঁদের স্বাক্ষর রাখবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়।

শেখ হাসিনা এই মেয়াদসহ পর পর তিনবার সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এই তিন মেয়াদে তিনি বাংলাদেশকে একটি অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে তাঁর সামনে তেমন কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই; কিন্তু রাজনীতির নামে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে তাঁর সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অনেক পক্ষ, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী আছে, যাদের অনেককে তিনি বিশ্বাস করে হয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পদায়ন করেছেন অথবা যাদের পদায়ন করেছেন তারা আবার নানাভাবে তাদের পদকে অপব্যবহার করেছেন বা করছেন। যাদের সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের প্রায় সবারই তো গণভবন বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অবাধ যাতায়াত ছিল, এমনকি যে ব্যক্তি খালেদা জিয়ার ছত্রপতি ছিলেন, তিনিও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বক্সে বসে ক্রিকেট খেলা উপভোগ করতে পারেন। এটি তো শেখ হাসিনার জন্য একটি মারাত্মক ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি। আবার অনেক বিশ্বাসভাজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাঁদের কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারকে বিব্রত করে, যার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটারদের হঠাৎ ধর্মঘট এবং তা নিয়ে বিসিবি সভাপতির প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা। বুধবার প্রধানমন্ত্রী ৯ বছর পর দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তকরণের ঘোষণা দেন। এর পরপরই দেখা গেল এই তালিকায় এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আছে, এই ঘোষণার আগে তাদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এই তালিকা করার দায়িত্বে কে বা কারা ছিলেন সে প্রশ্ন তো উঠবেই। এর আগে ২০১০ সালে এই এমপিওভুক্তি নিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টার মধ্যে বড় ধরনের টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি করেছিল।

সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ইসলাম ধর্মকে অপমান করে কোনো এক কাল্পনিক সংখ্যালঘুর নামে ভুয়া পোস্ট সৃষ্টি করে ২০১২ সালে রামুতে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করে একটি সম্পূর্ণ বৌদ্ধপল্লীতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অনেক বাড়িঘরই শুধু পোড়ানো হয়নি, প্রায় ১৫টি ঐতিহাসিক বুদ্ধমন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, তারপর সর্বশেষ ভোলার রক্তক্ষয়ী ঘটনা। সব কটির পেছনে আছে জামায়াত-শিবির আর বিএনপির কিছু অর্বাচীনের ষড়যন্ত্র। প্রতিবার যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে ঠিক তখনই বিএনপি ও তার মিত্ররা চিৎকার করে ওঠে আওয়ামী লীগের হাতে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। এই তত্ত্বটি প্রমাণ করার জন্যই এসব পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হয়। অথচ বাংলাদেশে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটানো না হতো, তাহলে দেশের সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে বাস করতে পারত। তবে এটি নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, ভোলার ঘটনা শেষ ঘটনা নয়। এমন ঘটনা আগামী দিনে ঘটতেই থাকবে।

কিছুদিন ধরে ড. কামাল হোসেনের একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন অনেক পুরনো ভাঙা মন্দিরের একই ছবি নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট করে বলেই যাচ্ছেন, অমুক জায়গায় গত দিন এই মন্দিরটি ভাঙা হয়েছে। অথচ হয়তো দেখা যাবে, এই ছবিটি কয়েক বছরের পুরনো। ভারতের কোনো একটি এলাকায় একজন মানুষকে কয়েকজন মিলে পেটাচ্ছে। ওই একই ব্যক্তি এই বলে তাঁর পোস্টে লিখেছেন, অমুক জায়গায় হিন্দুদের জায়গাজমি দখল করার জন্য এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কয়েক দিন পর পর ড. কামাল হোসেন ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ বেশ জোর দিয়েই বলে আসছেন সরকারের আয়ু শেষ। আ স ম আবদুর রব তো গত ২০ তারিখ সরকারের শেষ দিন বলে ঘোষণা করেছিলেন। আর রেজা কিবরিয়া, যাঁর বাবাকে বিএনপি গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল, তিনি এখন ড. কামাল হোসেনের দলে ভিড়ে প্রতিদিন সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছেন। অন্যদিকে রাজনীতির রিলিফ চরিত্র রুহুল কবীর রিজভী প্রতিদিনই কিছু একটা খোঁজ করেন, যাতে তিনি দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে সরকারকে একহাত নিতে পারেন। মির্জা ফখরুল সরকারের বিরোধিতা করার কিছু না পেয়ে ফেনী চলে যান। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পর্কে কিছু না বলে শুধু বলেন, ওসি মোয়াজ্জেমকে সরকার বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই খেলায় সবচেয়ে ধূর্ত খেলোয়াড় জামায়াত-শিবির। তারা তাদের কর্মকাণ্ড নীরবে চালিয়ে যাচ্ছে। শিবিরের বেশির ভাগ সদস্য এখন ছাত্রলীগে। অপেক্ষা করছে, সময় হলে খোলস ছেড়ে বের হবে। এদের ছাত্রলীগে ঢুকতেও অর্থ একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। দুর্ভাগ্য শেখ হাসিনার, তিনি যাঁদের বিশ্বাস করেন, তাঁরা সবাই মোটেও সেই বিশ্বাসের যোগ্য নন। তাঁদের অনেকেই নিত্যদিন প্রধানমন্ত্রীর ধারেকাছে থাকেন। সময়মতো তাঁকে একা ফেলে কেটে পড়বেন। যেমনটা ঘটেছিল এক-এগারোর পর। সার্বিক বিবেচনায় মনে হয়, পশ্চিমের আকাশে কিছু কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে