তহবিল একশ কোটির হলেও ৫ বছরে ঋণ বিতরণ ২০ কোটি

বিশেষ প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে স্বল্প সুদে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় গত পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক একশ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। কিন্তু এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখতে পারেনি।

২০১৪ সালে গঠিত এ তহবিল থেকে গেল পাঁচ বছরে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। আর তহবিলের ৮০ কোটি টাকাই পরে আছে অলসভাবে।

তবে অলসভাবে পরে থাকার জন্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা দুষছেন অঘোষিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাকে। তারা জানান, ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তা দেখলেই ঋণ দিতে চায় না।

তাদের ধারণা নতুন উদ্যোক্তাদের খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাদের অভিজ্ঞতা কম; তাছাড়া ব্যাংকারদের ছোট লোন পরিচালনা করা কঠিন- এ কারণে তহবিল মুখ থুবড়ে পরেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংকই আগ্রহ প্রকাশ করছে না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য বার বার বলে আসছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিলের উদ্যোগ কাজে আসছে না বাস্তবে। এটি আবার সচল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ঝুঁকি থাকলেও রাষ্ট্রীয় যে ব্যাংকগুলো রয়েছে সেগুলোকে ও দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ তহবিলের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, অলসভাবে পড়ে থাকা তহবিলের ৮০ কোটি টাকার বিষয়টি নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট না থাকলেও তরুণ উদ্যোক্তারা কম সুদে টাকা না পাওয়ার কারণ জানতে অনুসন্ধান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এছাড়া আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এর সঙ্গে নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে করা হয়েছে চুক্তি।

তৈরি করা হয়েছে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে নতুন উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল স্কিম। এর আওতায় যে সকল উদ্যোক্তার ক্ষুদ্র ব্যবসা আছে কিন্তু জামানতের অভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে না এবং তহবিল না থাকায় ব্যবসা বড় করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এসকল উদ্যোক্তাকে বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে ঋণ দেয়া। পাশাপাশি বিনা জামানতে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সহায়তা প্রদান করবে একজন গ্রাহককে।

এ জন্য ৩৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ১৮ কোটি টাকা ও সাতটি প্রতিষ্ঠান দুই কোটি টাকা নিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করে। বাকি ৮০ কোটি টাকা ২০১৪ সাল থেকেই অব্যবহৃত থেকে যায়।

প্রসঙ্গত, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ ধরনের পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে উদ্যোগী হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করলেও শেষ পর্যন্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত পাঁচ বছর আগে ১০০ কোটি টাকার এ তহবিল গঠন করলেও শেষ পর্যন্ত কমিয়ে ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। এ তহবিল পরিচালনার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে