শাশুড়িকে বিয়ের ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

টাঙ্গাইল প্রতিবেদক

আদালত
ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সম্প্রতি শাশুড়িকে মেয়ে জামাইয়ের বিয়ের ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শাশুড়ি মাজেদা বেগম।

আজ রোববার দুপুরে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোপালপুর আমলি আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন গোপালপুর আমলি আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম।

universel cardiac hospital

টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানবীর আহম্মেদ জানান, মামলায় আইন লঙ্ঘন করে বিয়ে, ধর্ম অবমাননা, শারীরিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, উপজেলার হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাদের তালুকদার, নিকাহ রেজিষ্ট্রি কাজী, সহকারী কাজী ও ইউপিসদস্যসহ ১১ জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুর রহমান জানান, আমাদের কাছে যেসব প্রমাণ রয়েছে, আশা করি এ মামলায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি গোপালপুরে কড়িয়াটা গ্রামে স্ত্রীকে ১১ দিনের মাথায় তালাক দিয়ে শাশুড়িকে বিয়ের ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে ঘটনাটির খবর প্রকাশিত হলে সমালোচনা শুরু হয়।

গত ২ অক্টোবর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কড়িয়াটা গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে নূরন্নাহার খাতুনকে বিয়ে করেন ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোনছের আলী।

বিয়ের পরদিন শাশুড়ি মাজেদা বেগম বেড়াতে যান মেয়ের বাড়ি। সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থানের পর ১১ অক্টোবর মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে নিয়ে নিজবাড়িতে ফেরেন শাশুড়ি মাজেদা। এর পরদিন সকালে নূরন্নাহার স্বামী মোনছেরের সংসার করবেন না বলে আপত্তি তোলেন মাজেদা। শুরু হয় পারিবারিক কলহ।

একপর্যায়ে মেয়ে নূরন্নাহারের স্বামী মোনছেরের সংসার না করতে অনড় থাকলে শাশুড়ি মাজেদা বেগম নতুন জামাতার সঙ্গে সংসার করবে বলে জানান। পারিবারিক এ সংকট নিরসনে অসহায় শ্বশুর নূর ইসলাম গ্রাম্য সালিশের স্মরণাপন্ন হন। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অন্যান্য ইউপি সদস্য ও গ্রামবাসীদের নিয়ে সালিশ বৈঠক বসে।

সালিশে শাশুড়ি মাজেদা বেগমকে মেয়ের জামাতা মোনছের আলী বিয়ে করার খবরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসি বাড়ি ঘেরাও করাসহ মারপিট করে। এক পর্যায়ে শাশুড়ি ও জামাতার মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রচুর মারধর করা হয়।

এরপর নুরুন্নাহারকে তালাক দিতে মোনছের আলীকে এবং তার শাশুড়িকে তালাক দিতে শ্বশুরকে বাধ্য করা হয়। একই বৈঠকে মোনছের আলী ও তার শাশুড়ির বিয়ের রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করেন কাজী গোলাম মওলা জিনহা।

যদিও ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী, একই দিনে তালাক ও বিবাহ দন্ডনীয় অপরাধ। ফলে একই বৈঠকে তালাক দিয়ে এই বিয়ে কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ নয়। আবার ইসলামি বিধান ও অনুশাসন অনুযায়ী, শাশুড়ি অর্থাৎ নিজের স্ত্রীর মাকে বিয়ে করা চিরস্থায়ী হারাম।

তবে এই ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় এতদিন কাউকে আইনের আওতায় আনা যায়নি বলে জানিয়েছেন গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে