বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচারের সন্দেহের তালিকায় থাকা চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে । এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার বিকালে এই চিঠি পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
দুদক কর্মকর্তা বলেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বিএফআইইউ এ পর্যন্ত যাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে আমরা তাদের তালিকা চেয়েছি। তালিকা পেলে তদন্ত শুরু হবে।
জানা গেছে, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে তাদের হিসাবে এখন লেনদেন হচ্ছে না। এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে তাদের সম্পদ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান চলছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হবে। এরপর তারা আরও বিশদ তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের সম্পদ সম্পর্কে তথ্য আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হবে।
জানা গেছে, হিসাব জব্দ তালিকায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই সরকারি দলের সদস্য।
এই তালিকায় রয়েছেন- যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, যুবলীগের জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান, যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
এছাড়া আরও কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নজরুল ইসলাম বাবু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- লেক ভিউ প্রপার্টিজ, আরএও কন্সট্রাকশন প্রভৃতি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়- ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনায় সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকের লকার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ নামে-বেনামে থাকা সব ধরনের সম্পদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
নজরদারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।