বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বড় বড় প্রকল্পে ৩৫ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সৌদি আরব। এ বিনিয়োগের জন্য দ্রুত কো-অপারেশন অ্যান্ড মিউচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টম ম্যাটার চুক্তি করতে চাচ্ছে দেশটি। ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়ে শুল্ক চুক্তি করার তাগিদ দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠিটি অর্থ বিভাগের সচিব আবদুল রউফ তালুকদার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নিকট পাঠিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদি আরব সরকারের জেনারেল কাস্টম অথরিটি শুল্ক চুক্তি অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে। শুল্ক চুক্তি করার জন্য সৌদি সরকার বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত মার্চে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কোসাইবির নেতৃত্বে বাণিজ্য ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতের অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব সরকারের মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে।
সৌদি আরবের মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত শুল্ক চুক্তির খসড়াটিও চিঠির সঙ্গে তারা সংযুক্ত করে দিয়েছে। এ খসড়ায় বলা হয়েছে, শুল্ক চুক্তির কো-অপারেশন অ্যান্ড মিউচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স বিধানের আওতায় দুই দেশ কাস্টম-বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করবে। কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা হলে অবশ্যই দেশগুলো তা একে-অপরকে জানাবে।
দুই দেশ মেধাস্বত্ব অধিকার সুরক্ষায় এ শুল্ক চুক্তিতে অধিক গুরুত্ব দেবে। এছাড়া আমদানি-রফতানির পণ্যগুলো নিজ নিজ দেশের আইন অনুসারে নির্দিষ্ট দেশে প্রবেশ করবে। কাস্টম আইন ভঙ্গ করলে এ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে।
শুল্ক চুক্তি অনুসারে অবৈধ ও স্পর্শকাতর পণ্যগুলো কোনোভাবেই দুই দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। এসব পণ্য হচ্ছে- আগ্নেয়াস্ত্র, মিসাইল, বোমা ও নিউক্লিয়ার পণ্যসামগ্রী। শিল্পকলা ও প্রত্নতত্ত্ব অর্থাৎ যেসব পণ্যের আর্থিক মূল্য রয়েছে এগুলোও আমদানি-রফতানি করা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ মাদক এবং যেসব পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সেসব পণ্যও আমদানি-রফতানি করা যাবে না।
শুল্ক চুক্তির খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, দুই দেশের কোনো পক্ষ আমদানি-রফতানি বিষয়ক জটিলতার জন্য সরকারের অনুমোদন-সাপেক্ষে আমদানি-রফতানিকারকরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। দুই দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কোনো সরকারের আবদার রক্ষা নাও করতে পারবে।
এ চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে অবশ্যই দুই পক্ষ সরকারের উচ্চমহলে বিষয়টি অবহিত করতে পারবে। সমস্যা দূর করতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের অর্থায়নে ঢাকা-বরিশাল-পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ স্থাপন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যেও দ্রুতগতির রেল সংযোগ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যে রেলপথ আছে, দ্রুতগতির রেল এ লাইন ব্যবহার করতে পারবে না। তাই নতুন করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো বাংলাদেশে তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্ট করবে সৌদি আরবের আকুয়া প্রো কোম্পানি। এছাড়া সৌদি আরবের এসএএলআইসি কোম্পানি, এসএবিআইসি কোম্পানি, মাদান কোম্পানি, আল-ফানার কোম্পানি, আল-বাওয়ানি কোম্পানি, আল সালাম এয়ারক্রাফট কোম্পানি, রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।
এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে দুটি সৌদি কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তারা বায়োমেডিকেল প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তারা ময়মনসিংহ ও জামালপুরে বাংলাদেশি টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে নিয়োগের সুযোগ করে দেবে। বিমান চলাচল খাতে রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও অন্যান্য সেবা অবকাঠামো তৈরিতে সৌদি আরব বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। লালমনিরহাটে এ সার্ভিস সেন্টার তৈরি করা হবে এবং উড়োজাহাজ সেবায় এটা আন্তর্জাতিক মানের একটি ফ্যাসিলিটি হবে।
- আরও পড়ুন >> আপিল বিভাগে এ টি এম আজহারুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল
শুধু তা-ই নয়, ১০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ফেনীতে তৈরি করা হবে। সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় আগ্রহ রেলপথ ও তেল রিফাইনারি খাতে। এছাড়া উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের মতো বড় প্রকল্প নিয়েও তাদের আগ্রহ রয়েছে।