সড়কে নতুন আইনের তেমন প্রভাব নেই

মত ও পথ প্রতিবেদক

ড্রাইভিং অবস্থায় মোবাইলে কথা বলার দৃশ্য
ড্রাইভিং অবস্থায় মোবাইলে কথা বলার দৃশ্য। ফাইল ছবি

নতুন সড়ক পরিবহন আইন আজ থেকে প্রয়োগ হলেও এর তেমন কোনো প্রভাব চোখে পড়ছে না সড়ক-মহাসড়কে। প্রতিদিনের মতোই নানা অনিয়ম চোখে পড়েছে।

পুলিশ সদস্যের উল্টো পথে বাইক চালানো, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো, বাস-সিএনজির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপার, ড্রাইভিং অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা-এ ধরনের নানা দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীতে।

আজ সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও ছিল না নতুন আইন প্রচারের কোনো ব্যবস্থা। এই আইন বিষয়ে জানেন না যেমন পথচারি, তেমনি চালক ও পুলিশ।

হেলমেট বাদে মোটরসাইকেল বা জেব্রা ক্রসিং বাদে অনেককে রাস্তা পারাপার হতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও সেটা সঠিক জায়গায় কম। তাই তাদের ফুটওভার ব্যবহারে অনীহা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগের চেয়ে কঠোর এই আইন বাস্তবায়নের জন্য আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ সড়ক-মহাসড়কের অনিয়ম বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এটা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আইনটি টেকসই করতে হলে কর্তৃপক্ষকেই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

কারণ অনেক জায়গায় জেব্রা ক্রসিংয়ের যে চিহ্ন সেটা মুছে গেছে। অনেক জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ দরকার যেখানে তা নেই। তাই সামগ্রিক বাস্তবতায় এই নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। অবকাঠামোগত ক্রটিগুলো সমাধান করা না হলে সাধারণ মানুষকে আইন মানাতে কষ্ট হবে।

গত ২২ অক্টোবর আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট জারি করে সরকার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। শুক্রবার থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে।

প্রণয়নের এক বছরেরও বেশি সময় পর আইনটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে এতদিন আইনটি বাস্তবায়নে যায়নি।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এই আইনের সার্থকতাটা তখনই হবে যখন আমার ভয় দেখানোর দরকার হবে না। আইনটা যুগোপযোগী করা হয়েছে কি না সেটা দেখতে হবে। প্রয়োগের আগে একটু প্রচার প্রচারণার দরকার আছে।

জুমার নামাজের পর শ্যামলী বাসস্টান্ডে জেব্রা ক্রসিং বাদে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। নতুন আইন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

তিনি বলেন, এটাই আমার শর্টকার্ট। যেহেতু আমার বাসা এখানে তাই এভাবেই রাস্তা পার হই।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে মিরপুর-গুলিস্তানগামী বাসের চালক রহমত উল্লাহ জানেন না কিছু। তিনি বলেন, এমন কিছু শুনিনি।’ তবে তার দাবি- ‘আইন হলে মানতে আমরা রাজি আছি। সেটা লেন হোক আর লাইসেন্সের বিষয়ে হোক। কিন্তু সড়কে যখন সাধারণ মানুষ পর হয় কেউ জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করে না। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হয় না। মোবাইল ফোন কানে নিয়ে, বাজারের ব্যাগ নিয়ে পার হবে। তখন দুর্ঘটনা ঘটলে চালকের দোষ হবে এটা মানতে পারি না।

গাবতলী পরিবহনের বেশ কয়েকজন চালক বলছেন, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলেই পুলিশ, মালিক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার জন্যই আমরা পারাপারি করে গাড়ি চালাই। এছাড়া বিআরটিএতে কাগজপত্র ঠিক করতে গেলেও ঘুষ দেওয়া লাগে। এটা বন্ধ করবে কে?

খামারবাড়ি মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শফিক আহমেদ বলেন, নতুন আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অনেক ভালো ধারণা রয়েছে। গতকালকের ডিউটি আর আজকের ডিউটির মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখছি। কালকে যেখানে অনেককে দেখেছি হেলমেট ছাড়া বাইক চালিয়ে চলে যেতে আজকে আর তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। মানুষজন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে নতুন আইন মেনে চলার। আমার মনে হয় এই রকমভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করা হবে। তাছাড়া আমাদের জনবল কম রয়েছে তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নতুন আইন সম্পর্কে সবার সহযোগিতার পাশাপাশি সচেতন হতে তাগিদ দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, আইনের মূল উদ্যেশ্যে হলো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। প্রাথমিক পর্যায়ে সহনীয়ভাবে এটা প্রয়োগ করা হবে। যাতে মালিক বা চালকের কোনো সমস্যা না হয়। এবং নতুন আইনের কার্যক্রম যেন শুরু করা যায়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে