বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি খোকার শারীরিক অবস্থার উন্নতির আশা ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এজন্য তার চিকিৎসা প্রায়ই বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খোকাকে দেখতে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটে গেছেন তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’
সাদেক হোসেনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ইশরাক জানান, ‘তার (খোকা) পুরো ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। অক্সিজেন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। কখনো কখনো পরিচিতদেরও চিনতে পারছেন না। গত কয়েক দিন ধরে চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।
খোকার ছেলে বলেন, ‘বড় হতাশা আর বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। আব্বু-আম্মু দুজনেরই পাসপোর্ট নেই। কী করব, তাও বুঝে উঠতে পারছি না।’
হাসপাতালে খোকার পাশে রয়েছেন স্ত্রী ইসমত হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক, ছেলে ইশফাক হোসেন।
এদিকে খোকার জীবনের শেষ ইচ্ছা তিনি দেশে ফিরবেন। কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারেননি বলে জানানো হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। পরবর্তী সময়ে কী হবে, এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে স্বজনদের মধ্যে।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপের রাজনীতি থেকে খোকা যুক্ত হন বিএনপির রাজনীতিতে শুরু থেকে। ঢাকা মহানগরের সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার ক্রীড়া সংগঠন হিসেবেও ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক পরিচিত রয়েছে।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে ঢাকার সূত্রাপুর-কোতয়ালি আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এবং খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার মৎস্য ও পশু সম্পদমন্ত্রী ছিলেন।
২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান অবিভক্ত ঢাকার মেয়র খোকা। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় বসবাস শুরু করেন।
ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি ও তার পরিবার। নিয়ম অনুযায়ী, ৬ মাস পরপর যাওয়া-আসা করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বৈধ রাখতে হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দেশে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয় এবং কয়েকটিতে সাজাও দেয় আদালত। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
২০১৭ সালে খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়। নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও এ ব্যাপারে কনস্যুলেট থেকে কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি বলে খোকার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সেখানে থাকাকালীন গত ১৮ অক্টোবর গুরুতর অসুস্থ হলে খোকাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৮ অক্টোবর তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটলে আইসিইউতে নেয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি জানায়, সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি করা হয় খোকাকে। সোমবার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পর ২৭ অক্টোবর সাদেক হোসেন খোকার শ্বাসনালি থেকে টিউমার অপসারণ করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন >> খুলনায় নির্মমভাবে শিশু হত্যার পর মাটিচাপা
জানা গেছে, লাগাতার ওষুধ সেবনের ফলে খোকার মুখে ঘা হয়ে গেছে। তিনি খাবার খেতে পারছিলেন না। পরে তার শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এর পর তাকে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে হাসপাতালেই।