সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসায় পরিবারের ওপর যেন বাড়তি চাপ না পড়ে বা অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়, সেজন্য সরকার বেশ আগেই সমন্বিত স্বাস্থ্যবীমার উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে নতুন সংযোগ হচ্ছে, সরকারি চাকরিজীবী স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তান, পিতা-মাতা বা শ্বশুর-শাশুড়িকেও এ বীমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ জন্য উপকারভোগীদের নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। তবে প্রিমিয়াম কত হবে সেটি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত কমিটির পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবীমা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কর্মচারীদের ছয় সদস্যের পরিবার (স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তান, পিতা-মাতা/শ্বশুর-শাশুড়ি)-কে ‘ভিত্তি’ ধরে জীবন বীমা কর্পোরেশন (জীবীক) ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (সাবীক) দুটি পৃথক প্রস্তাবনা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে।
জেলা প্রশাসক সম্মেলন- ২০১৮ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জনা গেছে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, প্রস্তাবনাটি চূড়ান্তকরণের পূর্বে জরুরিভিত্তিতে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. হুমায়ুন কবির বলেন, জেলাপ্রশাসক সম্মেলন- ২০১৮ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বীমার আওতায় আনার নির্দেশনা রয়েছে।
সে অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ জনানো হয়েছে।
এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, দুই সন্তান, পিতা-মাতা/শ্বশুর-শাশুড়িসহ মোট ছয় সদস্যের পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন হুমায়ন কবির।
এছাড়া স্বাস্থ্যবীমা প্রবর্তনের জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। নীতিমালার খসড়া তৈরির জন্য তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির প্রতি অনুরোধ জনান।
সরকারি চাকরিজীবীর ছয় সদস্যের পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় আনার একই প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবীমা প্রবর্তনে সরকারি কর্মচারীদের তথ্য-সম্বলিত ডাটা সংগ্রহ খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের আওতাধীন আইবাস প্লাস প্লাস ডাটাবেজে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের ডাটা সংগ্রহের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে।
কেফায়েত উল্লাহ আরও বলেন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ছয় থেকে সাতটি কল্যাণমূলক কাজের সেবা দিয়ে আসছে। স্বাস্থ্যবীমার মতো প্রকল্পের বীমাদাবি নিষ্পত্তিও কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে সম্ভব হবে।
এসব প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের সদস্যদের সমন্বিত স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের আওতায় চিকিৎসকের পরামর্শ ফি সর্বোচ্চ সীমা হবে পাঁচ হাজার, অন্যদিকে জীবন বীমা কর্পোরেশনের প্রস্তাব হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ১২ হাজার ৫০০ টাকা। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে প্রতি বছর ওষুধপত্রের প্রকৃত খরচ সর্বোচ্চ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা এবং জীবন বীমা কর্পোরেশন ধরেছে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রতি বছর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ খরচ ধরেছে ২০ হাজার টাকা, আর জীবন বীমা কর্পোরেশন ধরেছে ১০ হাজার টাকা।
প্রতি বছর অস্ত্রোপচারের জন্য সাধারণ বীমা কর্পোরেশন প্রকৃত খরচ সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা, আর জীবন বীমা কর্পোরেশন ধরেছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। আনুষঙ্গিক সেবা যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, ইনটেনসিভ কেয়ার সুবিধার প্রকৃত খরচ সর্বোচ্চ সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ধরেছে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা আর জীবন বীমা কর্পোরেশন ধরেছে ৮০ হাজার টাকা।
- স্বৈরাচার-স্বেচ্ছাচারিতার পতন অনিবার্য : মির্জা ফখরুল
- আটকে গেছে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ
স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ১৫ হাজার টাকা, জীবন বীমা কর্পোরেশন ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা, এবরশনের ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও জীবন বীমা কর্পোরেশন ৩০ হাজার টাকা ধরেছে। সিজারিয়ান প্রকৃত খরচ অথবা সর্বোচ্চ সীমা ৩০ হাজার এবং এক লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
তবে এ দুটো প্রস্তাবনায় হাসপাতালে ভর্তির সুবিধাদি উল্লেখ থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক খলিল আহমেদ বিষয়টি থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
এছাড়া স্বাস্থ্যবীমা বাস্তবায়নে বর্তমানে কর্মরত প্রায় ১৪ লাখ কর্মচারীর বীমাদাবির নিষ্পত্তি কীভাবে হবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রাখতে আহ্বান জানান তিনি।