কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ। তার জানাজায় অংশ নিতে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে সেখানে আনা হয় মরদেহ। বাদ জোহর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খোকাকে সর্বস্তরের জনতা শেষ শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা খোকার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পুষ্প অর্পণের মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সেখানে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চিত্রনায়ক উজ্জল এবং গণফোরাম ও এলডিপির পক্ষ থেকেও নেতারা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এর আগে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খোকার মরদেহবাহী গাড়িটি পৌঁছায়। পরে দক্ষিণ প্লাজায় অস্থায়ীভাবে স্থাপিত মঞ্চে মরদেহের কফিনটি রাখা হয়। সেখানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার আগে বাবার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া চান বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব হয়েছেন মশিউর আলম রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ খোকার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, জমিরউদ্দিন সরকার, এর মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, জয়নুল আবদীন, ফজলুল হক মিলন প্রমুখ জানাজায় অংশ নেন।
বাদ জোহর নয়াপল্টনে জানাজা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নেয়া হয়। সেখানে বিকেল ৩টায় তার তৃতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে খোকার মরদেহ গোপীবাগে তাঁর নিজ বাসভবনে নেওয়া হচ্ছে। বাদ আসর স্থানীয় ধূপখোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ দফা নামাজে জানাজা। পরে তাঁর লাশ জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে দাফন করা হবে।
আজ সকাল ৮টা ২৮ মিনিটের দিকে খোকার মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বাংলাদেশ সময় বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে তার মরদেহ নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন তার স্বজনরা।
বিমানবন্দরে খোকার মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিমানবন্দর থেকে খোকার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনে নেওয়া হয়।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা অংশ নিয়েছেন। জানাজা শেষে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় তার পরিবার।
গত রবিবার (৩ নভেম্বর) রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিট) নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা।