কয়েক দশক ধরে চলা ভারতের বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির মামলার রায় অবশেষে ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার বিতর্কিত এই মামলার রায় ঘোষণা করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার বিতর্কিত সেই স্থানে রাম মন্দির নির্মাণ হবে। অন্য এক স্থানে বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জায়গা দেবে সরকার।
চলুন জেনে নেয়া যাক বহুল বিতর্কিত এই মামলার ইতিহাস-
১৫২৮ সালে অযোধ্যায় তৈরি হয় বাবরি মসজিদ। হিন্দুদের কিছু সংগঠন দাবি করতে শুরু করে মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে এই মসজিদ। ১৮৫৩ সালে প্রথম এই ইস্যুতে বিরোধ বাঁধে।
১৮৫৯ সালে ব্রিটিশরা একটি প্রাচীর দিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের প্রার্থনার জায়গা আলাদা করে দেয়। এভাবেই ৯০ বছর ধরে প্রার্থনা চলছিল। ১৯৪৯ সালে প্রথম এই জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতে যায়। সেই সময় রামের মূর্তি স্থাপন করা হয় মসজিদের ভেতরে।
১৯৮৪ সালে রাম মন্দির গড়ার দাবি নিয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা একটি কমিটি তৈরি করেন। তিন বছর পর একটি জেলা আদালত ওই বিতর্কিত এলাকা হিন্দুদের প্রার্থনার জন্য খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়। মুসলিমরা তৈরি করে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি।
এরপর ১৯৮৯ সালে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ওই স্থানে। ১৯৯০ সালে রাম মন্দির তৈরির সমর্থনে রথযাত্রা করেন এলকে আদবানী।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয় কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। দেশ জুড়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়; এতে প্রাণ যায় ২ হাজার মানুষের। ১০ দিন পর তৈরি হয় তদন্ত কমিটি। ১৭ বছর বাদে ২০০৯ সালে সেই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টে আদবানী, বাজপেয়ীসহ ১৭ জনের নাম ছিল।
২০০৩ সালে এই মামলার জন্য আদালত সাতজন হিন্দু নেতাকে তলব করে, তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাও ছিলেন। লখনউতে মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতীর বিরুদ্ধে মামলা চলে। এ বছরের জুলাই মাসে ডেডলাইন দিয়ে দেয়া হয়, যাতে ৯ মাসের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা হয়।
- মোদি সরকারের খয়রাতি জমিতে মসজিদ করবে না মুসলিমরা : আসাদ ওয়াইসি
- বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে মুসলিমদের অসন্তোষ
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্ট একটি রায় দেয়। এতে বলা হয়, ওই বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া হবে। নির্মৌহী আখড়া, রাম লাল্লা ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
প্রথমে তিনজন মধ্যস্থতাকারী দেয়া হয় এই মামলার জন্য। পরে, গত ৬ আগস্ট থেকে প্রত্যেকদিন এই মামলার শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। ১৬ অক্টোবর সেই শুনানি শেষ হয়।