সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ দেয়ার উদ্দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার নীতিমালা- ২০১৯ এর খসড়া করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
জাতীয় পর্যায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ ও কারিগরি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান- এই তিন শ্রেণিতে ১টি করে মোট ৬টি পুরস্কার দেয়া হবে। একইভাবে বেসরকারি পর্যায়েও ৬টি পুরস্কার দেয়া হবে।
জেলা পর্যায়েও সাধারণ ও কারিগরি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান- এই তিন শ্রেণিতে ১টি করে মোট ৬টি পুরস্কার দেয়া হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রেও ৬টি পুরস্কার দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার দিতে আমরা একটি নীতিমালার খসড়া করেছি। খসড়াটি চূড়ান্ত হলে আগামী বছর ডিজিটাল দিবস থেকে পুরস্কারটি দিতে পারব বলে আশা করছি।’
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, দল, প্রতিষ্ঠানকে অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগানো এবং স্বীকৃতি দিতে এই পুরস্কার চালু করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, রূপকল্প- ২০২১, তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে অনেক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। সরকারি দফতরের কাজের দ্রুততা, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা সহজে ও দ্রুততার সাথে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে ই-গভর্নেন্স তথা ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা স্মরণীয় করে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্রের মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বরকে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পত্রের মাধ্যমে সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস’ এর পরিবর্তে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার নীতিমালা নিয়ে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। সেখান থেকে পুরস্কারের সংখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ এসেছে। সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে নীতিমালার খসড়াটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।’
সাধারণ ও কারিগরি দুটি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়া হবে উল্লেখ করে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাধারণ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে মানব সম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে অবদান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান, কেন্দ্রীয় বা মাঠ পর্যায়ে ই-সার্ভিস বাস্তবায়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের বিষয় বিবেচনায় নেয়া হবে।
আর কারিগরি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সফটওয়ার/হার্ডওয়ার উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের নিরাপত্তা (সাইবার নিরাপত্তা), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং বাংলাদেশে সমৃদ্ধি আনতে ইমার্জিং টেকনোলজির ব্যবহারের বিষয় বিবেচিত হবে।
জাতীয় পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি ক্ষেত্রে তিন ক্যাটাগরিতে ৬টি করে মোট ১২টি পুরস্কার দেয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ, নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র, নগদ জনপ্রতি এক লাখ টাকা দেয়া হবে। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে দলের সকল সদস্যকে সম্মাননাপত্র, নগদ জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। দলের সদস্য ৫ জনের বেশি হলে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সমভাবে বণ্টন করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও একটি ল্যাপটপ দেয়া হবে।
জেলা পর্যায়ে সরকারি এবং বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি ক্ষেত্রে তিন ক্যাটাগরিতে ৬টি করে মোট ১২টি পুরস্কার দেয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও নগদ টাকা দেয়া হবে। ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র, নগদ জনপতি ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে দলের সব সদস্যকে সম্মাননাপত্র, নগদ জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ ২৫ হাজার দেয়া হবে। দলের সদস্য ৫ জনের বেশি হলে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা সমভাবে বণ্টন করা হবে। প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে ক্রেস্ট ও একটি ল্যাপটপ দেয়া হবে।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার দিতে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে মনোনয়ন আহ্বান করা হবে। জেলা কমিটি বা অধিদফতর পর্যায়ের কমিটিতে মনোনয়ন পাঠানো হবে ৫ আগস্টের মধ্যে। জেলা কমিটি বা অধিদফতর পর্যায়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা কমিটি বা অধিদফতর মন্ত্রণালয়ে মনোনয়ন পাঠাবে।
মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পর্যায়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় কমিটির কাছে উপস্থাপনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে পাঠানো হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ১০ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় কমিটিতে উপস্থাপন করবে। জাতীয় কমিটি মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। প্রতি বছর ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরস্কার ঘোষণা করা হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মনোনয়নের প্রাথমিক প্রস্তাবনা ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগের স্থানীয় দফতর প্রধানের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
মাঠ পর্যায় থেকে মনোনয়ন পাঠানোর জন্য বাছাই কমিটি থাকবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে থাকবে জেলা বাছাই কমিটি। অধিদফতর বা সংস্থা প্রধানের নেতৃত্বে থাকবে অধিদফতর বা সংস্থা পর্যায়ের বাছাই কমিটি। সচিবের নেতৃত্বে থাকবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পর্যায়ের কমিটি।
- আরও পড়ুন >> প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের এক যুগ
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্তি সচিবের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নেতৃত্বে থাকবে প্রাথমিক বাছাই কমিটি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে থাকবে জাতীয় কমিটি।