অষোঘিত পরিবহন ধর্মঘটে দিনভর পথে পথে চরম দুর্ভোগ

মত ও পথ প্রতিবেদক

পরিবহন ধর্মঘটে পথে পথে চরম দুর্ভোগ
ছবি : সংগৃহিত

অষোঘিত পরিবহন ধর্মঘটে দেশজুড়েই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। আজ বুধবার ধর্মঘটে নামেন পণ্যবাহী যানের মালিক-শ্রমিকরা। তবে তাদের বাধায় অনেক জায়গায় বাস চলাচলও বন্ধ ছিল।

দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাননি রাজধানীর সাধারণ মানুষও। বিশেষ করে সকালের দিকে গণপরিবহনের সংকট ছিল বেশি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ে। ফলে দুর্ভোগ কিছুটা কমে আসে।

আজ বুধবার ঢাকার ভেতরে যখন এই অবস্থা চলছিল তখন সকাল থেকে দুপুর অবধি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা আরিচা মহাসড়কে একঅর্থে বন্ধ ছিল বাস চলাচল।

এসব জায়গায় শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে বাধা দেয়। বাধার হাত থেকে রক্ষা পাননি পরীক্ষার্থী, রোগীবাহী যান। ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড ও নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডে চালকদের মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে মায়িশা আতিয়া বসুন্ধরায় কর্মস্থলে প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করেন। কিন্তু গতকাল সড়কে দীর্ঘ অপেক্ষা করেও কোনো বাস না পেয়ে সিএনজি নিয়ে আসতে হয়েছে তাকে।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে ৩শ টাকা দিয়ে সিএনজিতে আসতে হয়েছে বসুন্ধরা। যেখানে ৩০ টাকায় আসা যায় সেখানে বাড়তি ২৭০ টাকা খরচ হলো। এ টাকা কে দেবে?

জনগণকে জিম্মি করে কোনো ধরনের কর্মসূচি না দিতে সরকারের একাধিক মন্ত্রী আহ্বান জানালেও তাতেও সাড়া দেননি পণ্যবাহী পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। উল্টো নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের ৯টি ধারা সংশোধন ও ৯টি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বৈঠক থেকেও আসেনি কোনো সমাধান। গণপরিবহনের মালিকদের দাবি, শ্রমিকদের এই আন্দোলনে তাদের নেতৃত্ব বা সমর্থন নেই।

তারা বলছেন, শ্রমিকদের একটি অংশ যান চলাচলে বাধা দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সকাল থেকেই তাদের গাড়ি সড়কে ছিল।

মোহাম্মদপুর থেকে চিটাগাং রোডে চলাচলকারী রজনীগন্ধা পরিবহনের মালিক আব্দুল কাদির বলেন, সকালে আমাদের ৫৫টি বাস বের হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত ৩০টি চলছে। বাকিগুলো আন্দোলনে থাকা শ্রমিকদের কারণে বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান শ্রমিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ গণপরিবহন সকাল থেকে বন্ধ ছিল। এই রুটে লোকাল বাস অথবা দূরপাল্লার বাসও চোখে পড়েনি। ফলে মহাসড়ক দখলে নিয়েছিল রিকশা-সিএনজি-লেগুনা ও ভ্যান।

টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কের কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীরা গাড়ির জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করলেও কোনো যানবাহন পাননি। ফলে দুর্ভোগে পড়েন প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ।

পরে অবশ্য যে যেভাবে পারছে সেভাবে অটোরিকশা-ভ্যান-সিএনজি অথবা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটেছেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে এই মহাসড়কের পরিস্থিতি।

অপরদিকে আন্দোলনের প্রভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল থেকে মহাসড়কে ছিলো না তেমন কোনো যানবাহন। মহাসড়কের কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীরা গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু বাসের দেখা পাননি। এই দিকেও লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার চলাচল করেছে সকাল থেকে।

ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল ৭টা থেকে সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট করেছিলেন শ্রমিকরা। তারা চালকদের কাছ থেকে গাড়ির কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। কোনো কোনো চালকের মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দিয়েছে।

ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেটসহ আশপাশের সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল শুরু হওয়ার পরও অবশ্য গণপরিবহনের ব্যাপক সংকট ছিল সড়কে। অসংখ্য মানুষকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

তবে বেলা ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে অবস্থানরত পরিবহন শ্রমিকেরা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অবরোধ তুলে দেয়ার পর এই দুটি মহাসড়ক সচল হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে