মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক নাটকের অন্য আরেক পর্বের সাক্ষী হলো ভারতীয় পার্লামেন্ট। আজ সোমবার লোকসভায় মহারাষ্ট্র ইস্যুতে কংগ্রেস সাংসদদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে অধিবেশন।
লোকসভার ভেতরে তো বটেই, বিক্ষোভের আঁচ গড়ায় সংসদ চত্বরেও। সংসদের ভেতরে শাসকদল বিজেপির প্রতি ক্ষোভ উগরে দেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
তিনি বলেন, বিজেপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে সংসদ চত্বরে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রতিবাদে সরব হন দলের এমপিরা। মহারাষ্ট্রে রাতারাতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে- বাইরে এ বিক্ষোভের জেরে ব্যাহত হয় অধিবেশনের স্বাভাবিক কাজ। খবর এনডিটিভির।
শনিবার সবার অগোচরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদে দেবেন্দ্র ফাড়নবিশ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার। এ শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস।
জরুরি ভিত্তিতে রোববারও শুনানি হয়েছে শীর্ষ আদালতে। সোমবার শুনানি শেষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রায় দেবে সুপ্রিমকোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ।
গত দু’দিন সংসদের অধিবেশন বন্ধ ছিল। সোমবার অধিবেশন শুরু হতেই মহারাষ্ট্রের ঢেউ আছড়ে পড়ল সংসদে। ১১টায় সংসদের দুই কক্ষেরই অধিবেশন শুরু হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ১১টা ২ মিনিটে রাহুল গান্ধী বলতে ওঠেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি। মহারাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমি আজ এখানে প্রশ্ন করতে এসেছিলাম। কিন্তু আমার প্রশ্ন করার কোনো ইচ্ছাই নেই। কারণ মহারাষ্ট্রে গণতন্ত্রের হত্যা হয়েছে। তাই প্রশ্ন করার কোনো অর্থই হয় না।’
এর পরেই শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। ওয়েলে নেমে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ, হই-হট্টগোল করতে থাকেন কংগ্রেস সাংসদরা। অধিবেশনের কাজ কার্যত পণ্ড হয়। বাধ্য হয়ে স্পিকার ওম বিড়লা কেরালের ত্রিশুরের কংগ্রেস সাংসদ টিএন প্রতাপন এবং এরনাকুলামের সাংসদ হিবি এডেনকে মার্শাল দিয়ে বাইরে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন।
তারপর মার্শালরা এসে কংগ্রেসের সাংসদদের বের করার চেষ্টা করেন। তখনই লোকসভার মার্শালদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা। পরে মহিলা সাংসদদের ‘গায়ে হাত তোলা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ওয়াক আউট করে কংগ্রেস।
রাজ্যসভাতেও প্রায় একই ছবি। মহারাষ্ট্র ইস্যুতে অধিবেশনের শুরু হতেই শোরগোল শুরু করেন কংগ্রেস সাংসদরা। তার সঙ্গে ডিএমকেসহ আরও কয়েকটি বিরোধী দলের সাংসদরাও যোগ দেন বিক্ষোভে। ওয়েলে নেমে চলতে থাকে বিক্ষোভ-হইচই, বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা। তার জেরে দুপুর ২টা পর্যন্ত অধিবেশন মলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইড়।
কিন্তু সোমবার সংসদের ভেতরের এ উত্তাপ বাইরেও টেনে এনেছেন কংগ্রেস সাংসদরা। লোকসভায় দুই সাংসদকে বের করার নির্দেশ দেয়ার পর মার্শালরা ভেতরে ঢুকে দলের দুই মহিলা সাংসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের।
- আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদলের আভাস
- এক সিস্টেমেই কমেছে লক্ষাধিক সরকারি চাকরিজীবী ও পেনশনারের সংখ্যা!
এর প্রতিবাদে এবং মহারাষ্ট্রে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’র অভিযোগ তুলে সংসদ ভবন চত্বরে বি আর আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে ব্যানার হাতে বিক্ষোভে শামিল হন কংগ্রেস এমপিরা। ‘গণতন্ত্রের হত্যা বন্ধ হোক’ লেখা ব্যানার এবং স্লোগানে সরব হন দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা।
মোদি সরকারকে উদ্দেশ্য করে, ‘শেম শেম (লজ্জা লজ্জা)’ ধ্বনিও তোলেন তারা। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন সোনিয়া গান্ধী। মহিলা সাংসদদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নালিশ স্পিকারের ঘরে গিয়েও জানিয়ে আসেন সোনিয়া। পাশাপাশি মঙ্গলবারও মহারাষ্ট্র এবং ‘দুর্ব্যবহার’ ইস্যুতে বিক্ষোভ জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।