খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়া
ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে তার বিষয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডকে এই রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওইদিন পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিন পর্যন্ত জামিনের শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছে।

universel cardiac hospital

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দিয়েছেন।

আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এসময় অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মীর হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মমতাজউদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।

শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্টে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ বলেন, বাইরে যেভাবে দেখলাম, নিরাপত্তার যে অবস্থা, তা দেখে আমারতো কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। এমনভাবে ঘিরে রাখা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া কোনো জঙ্গি অথবা মৃত্যুদণ্ডের আসামি।

এসময় প্রধান বিচারপতি হাসতে হাসতে বলেন, আমরাওতো কাঁপছি। আমাদের কোর্টের গেইটে গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। কোর্টের বারান্দায় মিছিল করা হয়েছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, এরকম মিছিল অতীতেও অনেকবার হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার কি কোনো অসুবিধা হয়েছে? জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি বারের (আইনজীবী সমিতি) সাবেক সভাপতি। তাই আমার অসুবিধা হয়নি। কিন্তু অন্যদের হয়েছে।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা কাগজপত্র দেখে বিচার করবো। তবে চাইবো যেন আদালতের বারান্দায় কোনো মিছিল না হয়।

জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, ওটা রাজনৈতিক ইস্যু। সেটা রাজনীতির মাঠেই থাকুক। আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করেছি। আমাদের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ দিচ্ছি।

এ কথা বলে তিনি লিখিত সারসংক্ষেপ আদালতে দাখিল করেন। তিনি বলেন, আমরা মামলার বিষয়বস্তুতে যাবো না। খালেদা জিয়ার সাত বছরের সাজা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। এসময় আদালত তার কাছে জানতে চান, এই মামলায় কবে থেকে খালেদা জিয়া কারাগারে?

জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে। এরপর তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একজন বৃদ্ধা। তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ। তিনি বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি। দিনের পর দিন তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে। মামলার বিষয়বস্তুর চেয়ে আমাদের আবেদন স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনার জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা মানবিক কারণে তার জামিনের বিষয়টি তুলে ধরতে চাই।
শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা মামলার বিষয় বস্তু নিয়ে বলতে চাই না। এটা হাইকোর্টে।

আপিলের শুনানিতে বলবো। এখানে বলতে চাই, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। খুবই অসুস্থ, বৃদ্ধা। দিনদিন তার শারীরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। শুধুই মানবিক কারণে জামিন চাই। আমরা হাইকোর্টে জামিনের শুনানিকালে সব কিছুই তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু রায়ে তার প্রতিফলন হয়নি। একারণে আপনাদের সামনে এসেছি।

এসময় আদালত বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) যে অসুস্থ। সে বিষয়েতো কিছুই বলছেন না। জবাবে জয়নুল আবেদীন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার রিপোর্টের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। তার আত্মীয়-স্বজনও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে আমাদের তা দেওয়া হচ্ছে না। এরপরও আমরা অনেক চেষ্টা করে একটি রিপোর্ট উদ্ধার করেছি। যেহেতু এটা যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় আনা হয়নি তাই আদালতে তা দাখিল করতে চাই না। শুধুমাত্র আমরা তুলে ধরতে চাই।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতই অসুস্থ যে উঠতে বসতে পারেন না। তাই আপনারা তার চিকিৎসার রেকর্ড চাইতে পারেন।

তিনি বলেন, গতকাল বুধবার আমি নিজে বিএসএমএমইউ’র ভিসির সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। তার কাছে রিপোর্ট চাইলাম। তিনি বলেছেন যে অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব রিপোর্ট দিতে নিষেধ করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে বলেছেন, আদালতের আদেশ ছাড়া রিপোর্ট দেবেন না। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, মিথ্যা কথা। আমার সঙ্গে ভিসির কোনো কথাই হয়নি। আমাকে অপবাদ দিতেই এটা বলা হচ্ছে।

এ সময় জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার প্রেসক্রিপশনে যে ওষুধের নাম লেখা হয়েছে তার একটি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। তার (খালেদা জিয়া) যে অবস্থা তাতে দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব না। এছাড়া মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে খালেদা জিয়ার আরো ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন।

এ সময় আদালত বলেন, এই রিপোর্ট কবে কার? জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, গত ৭ অক্টোবর মেডিক্যাল বোর্ড গঠন হয়েছে। ৩০ অক্টোবর বোর্ড রিপোর্ট দিয়েছে। এই রিপোর্ট সত্য কি না সেজন্য আপনারা তাদের কাছে রিপোর্ট চাইতে পারেন। এরপর আদালত মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট চেয়ে আদেশ দেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গতবছর ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে জামিনের আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট গত ৩১ জুলাই জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। এই খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আপিল করেন খালেদা জিয়া।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে