আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে তিনটি মামলার রায়

সম্পাদকীয়

আদালত
ফাইল ছবি

সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মামলার রায় বেরিয়েছে। মামলা তিনটি হচ্ছে- ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলা এবং হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা।

বৃহস্পতিবার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসা শিক্ষার্থী প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিওতে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। রায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় মোয়াজ্জেম হোসেনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

universel cardiac hospital

২৬ ধারায় অপরাধ—অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ। ২৯ ধারায় অপরাধ—ওই ভিডিও প্রচার। আদালতের বিবেচনায় দুটি অপরাধই প্রমাণিত হয়েছে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রতিটি ধারায় পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই অর্থ পাবে নুসরাতের পরিবার। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আসামি মোয়াজ্জেমকে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

প্রায় এক বছরের বেশি সময় আগে কার্যকর হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন মামলায় প্রথম কোন রায় হল এবং সেটি এক পুলিশ কর্মকতার বিরুদ্ধেই হয়েছে। এর দ্বারা মানুষ আবারও বুঝল আন্তরিকতার সাথে চাইলে যেকোন অপরাধের দ্রুত ও প্রত্যাশিত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা পুলিশ বাহিনীর আছে।

ফৌজদারি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ার এই দিকটি পুলিশ বিভাগ থেকে বিশেষ নজরের দাবি রাখে। প্রতি বছর কি পরিমাণ মামলার তদন্ত বকেয়া থেকে যায় সেই পরিসংখ্যান ধরে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে নিশ্চয়ই এই বিলম্বের অবসান ঘটানো সম্ভব।

পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নৃশংসতা, এফআইআর নথিভুক্ত করতে অনীহা, তদন্তে গাফিলতি এবং ভুয়ো তথ্য দেওয়ার অভিযোগ অনেক পুরোনো। কিন্তু নিজেদের একজন সদস্যেরও যে বিচার করা যায়, পুলিশ বাহিনী ওসি মোয়াজ্জেমের ক্ষেত্রে সেটি প্রমাণ করেছে।

তাছাড়া লিটন হত্যার দায়ে বৃহস্পতিপার গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ৮ আসামির ৭ জনের বিরুদ্ধেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন, বাকি একজন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন।

এর আগে বুধবার চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলারও রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে, খালাস পেয়েছেন একজন।

এই তিন মামলারই কার্যক্রম অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলার রায়ও দ্রুততার সঙ্গে দেয়া হয়েছিল।

আমরা মনে করি, এই তিনটি মামলার রায় দেশে বিচারহীনতা অথবা বিলম্বিত বিচারের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছিল তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বিচার বিলম্বিত হলে ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। তাই আমরা বলব, উপরের মামলাগুলোর মতো বিশেষত চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে