শৈত্যপ্রবাহ, দাবদাহ, নানা রোগ বালাই, খাবারের অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফণীর আঘাতে সুন্দরবন অঞ্চলের চিংড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ অঞ্চলের ১৩ উপজেলার চাষীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। লোকসান এড়াতে তারা কাঁকড়া চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। পাঁচ মাসে সাত দেশে ২৭ লাখ ডলার মূল্যের কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে।
অপরদিকে, ছয় মাসে ১৫ কোটি ডলার মূল্যের চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে।
চীনের পাশাপাশি আরও ছয়টি দেশে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়া রপ্তানি বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে ২৬ লাখ ৮১ হাজার ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়েছে। হিমায়িত চিংড়ির চেয়ে বিদেশে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়া জনপ্রিয় হয়েছে।
জানা যায়, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ায় বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। রোগ-বালাই কম ও দাম বেশি পাওয়ার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন ১৩ উপজেলায় কাঁকড়ার চাষও বেড়েছে।
একাধিক কাঁকড়া চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন মাস সময়ের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা জাতের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি যোগ্য হয়। শৈত্যপ্রবাহ ও দাবদাহে কাঁকড়া মারা যায় না। প্রতি কেজি চিংড়ি প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও কাঁকড়া ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হয়।
স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফা হওয়ায় সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, শ্যামনগর, আশাশুনি কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ হয়েছে।
খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় গত অর্থ বছরে ২৮ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৯৮৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো খুলনা সূত্র জানায়, গত পাঁচ মাসে ২৬ লাখ ৮১ হাজার ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।
এর মধ্যে জুন মাসে ২ লাখ ৬৯১, ডলার জুলাই মাসে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ডলার, আগস্ট মাসে ৫ লাখ ৬৩ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে ৯ লাখ ২৫ হাজার, অক্টোবর মাসে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ডলার মূল্যের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।
স্থানীয় রপ্তানিকারক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান লাবু জানান, মোংলা বন্দর সংলগ্ন দিগরাজ মোকাম থেকে প্রতিদিন বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ১০ মেট্রিকটন কাঁকড়া ঢাকার নলভোগ আড়তে যায়। প্রতি কেজি কাঁকড়া প্রকারভেদে সাড়ে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চীন ও তাইওয়ানে সুন্দরবন অঞ্চলের কাঁকড়ার চাহিদা বেশি।
মোংলার দিগরাজ মোকামের মেসার্স মাহফুজা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আরিফ বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, দিগরাজ মোকামের ৩০টি আড়তে অর্ধশত ব্যবসায়ী কাঁকড়া ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম ছিল জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে এখন কাঁকড়া প্রজনন মৌসুম পরিবর্তন হয়ে মার্চ ও এপ্রিলে হচ্ছে। ফলে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকায় বিদেশের বাজার মার খাচ্ছে।
এতে ব্যসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি থাকায় চাষীরাও কাঁকড়ার অধিক উৎপাদন পাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, বাগেরহাট সদর উপজেলা, রামপাল ও মোংলা উপজেলায় গত অর্থ বছরে ৬০০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়েছে। খামার ও স্থানীয় নদ-নদী থেকে এ সময় ২ হাজার ৬২৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, জেলার কালীগঞ্জ, দেবহাটা, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় গেল অর্থ বছরে ৩০৭ হেক্টর জমিতে ৩২০০ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়। চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষ লাভজনক হওয়ায় এখানকার চাষিরা কাঁকড়াতে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে।