উদঘাটন হয়নি রুম্পার মৃত্যুরহস্য, দাফন সম্পন্ন

মহানগর প্রতিবেদক

রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা
রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা। ছবি : সংগৃহিত

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মরদেহ উদ্ধারের ৫০ ঘণ্টায়ও মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রুম্পাকে ভবন থেকে ফেলে, নাকি ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় হত্যারহস্য বের করতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে দাবি করছে পুলিশ। তবে পুলিশের বেশ কয়েকটি দল এই মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে।

আজ শুক্রবার ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বিজয়নগরে রুম্পার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফনের সময় শত শত মানুষ অংশ নেয়। নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের মতো রুম্পা হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করে এলাকাবাসী।

বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

প্রিয় সহপাঠীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না রুম্পার সহপাঠীরা। শুক্রবার রাজধানীর বেইলি রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা। দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তারা।

যে জায়গায় রুম্পার মরদেহ পাওয়া যায়, তার আশপাশে ছেলে ও মেয়েদের বেশ কিছু হোস্টেল রয়েছে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার মেরুদণ্ড, বাঁ হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, লাশের শরীরের আঘাত দেখে মনে হয়েছে ওপর থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন আছে। আলামত সংগ্রহের পর ইনজুরিগুলোতে যা পাওয়া গেছে, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে উঁচু কোনো জায়গা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো সিসিটিভি পাওয়া যায়নি। এটি পাওয়া গেলে তদন্ত সহজ হতো। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম হত্যারহস্য উন্মোচনে কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন হবে।

২৫৫ শান্তিবাগে পরিবারসহ থাকতেন রুম্পা। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক।

ঘটনার দিন রুম্পা দুটি টিউশনি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। পরে কাজ আছে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। নিচে নেমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও পায়ের স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরনো স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু রাতে আর বাসায় ফেরেনি। স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। পরে খবর পেয়ে রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে রুম্পাকে শনাক্ত করেন তারা।

ছবি : সংগৃহিত

সহপাঠীদের বিক্ষোভ

শুক্রবার সকাল থেকে রুম্পার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেইলি রোড ক্যাম্পাসে। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রুম্পার হত্যার বিচার দাবি করে ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। রুম্পা হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

হত্যারহস্য দ্রুত উন্মোচনের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, জড়িতদের দ্রুত বের করতে হবে। নানা আলামত থেকে মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

রহস্য উন্মোচন ও সুষ্ঠু বিচার চায় পরিবার

রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কাউকে সন্দেহ করতে পারেনি তার পরিবার। তবে সুষ্ঠু বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশা করছেন তারা।

রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন বলেন, আমি অনেক আশা করে মেয়েকে ইংরেজি বিভাগে পড়াচ্ছিলাম। এভাবে ও চলে যাবে ভাবতে পারিনি। আশা করছি দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে