সবুজের নগরীতে নজরকাড়া এক লেকের শান্ত পানিতে জলকেলিতে মেতে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। তাদের মধ্য থেকে কিচিরমিচির শব্দে একটি ঝাঁক উড়ে দিগন্তের দিকে ছুটি চলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকটি ঝাঁক এসে পানিতে দুরন্তপনা শুরু করছে।
এভাবেই অতিথি পাখির কলরবে দিনভর মুখর রয়েছে লাল-সাদা শাপলায় পূর্ণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও আশপাশের লেক, পুকুরসহ নানা জলাশয়।
শীতের আমেজের সঙ্গে সঙ্গে অজানা দিগন্তে শত-সহস্র মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাবিতে এসেছে অতিথি পাখিরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগরের রূপের বিশেষণে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে এরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল-সাদা শাপলায় পূর্ণ লেক ও বিভিন্ন জলাশয় কিচিরমিচির শব্দ ও দুরন্তপনায় মুখরিত করছে অতিথি পাখিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেক, ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকসহ সুইমিংপুল সংলগ্ন জয়পাড়া লেকে আশ্রয় করে নিয়েছে তারা।
প্রতিদিন এ দৃশ্য দেখতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাম্পাসে ভিড় করছেন পাখিপ্রেমী, শৌখিন দর্শনার্থী ও পেশাদার আলোকচিত্রীরা।
দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশি ছোট হাঁসজাতীয় এসব পাখি বরফ শুভ্র হিমালয় ও সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসে। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু সময় কাটিয়ে পরে আবার ফিরে যায় নিজ দেশে। তাই এদের বলা হয় অতিথি পাখি।
মূলত নিজ অঞ্চলের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে প্রতিবছরই বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উড়ে আসে অতিথি পাখিরা।
এই পাখিদের মধ্যে রয়েছে- সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটিসহ নানা প্রজাতি।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে এখানে প্রথম অতিথি পাখি আসা শুরু করে। এসব পাখির মধ্যে ১২৬টি দেশীয় ও ৬৯টি বিদেশি প্রজাতি মিলিয়ে মোট ১৯৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
অতিথি পাখিরা অক্টোবরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জলাশয়ের আশপাশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। আর ডিসেম্বরের দিকে তা পরিপূর্ণ রূপ পায়।
- সভাপতি ছাড়া দলের যেকোনো পদে পরিবর্তন আসতে পারে : কাদের
- বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী : ঢাকায় আসছেন মোদি, প্রণব ও সোনিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, ইতোমধ্যে পাখিরা আসতে শুরু করেছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিতে তাদের বিচরণক্ষেত্র ও জলাশয়গুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সংরক্ষণে জলাশয়ের তীর সংস্কার করা হয়েছে।
প্রতিবছর পাখি সংরক্ষণ ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে পাখি মেলার আয়োজন করা হয়। এবারও যথাযথ সময়ে তা আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।