আওয়ামী লীগের কাউন্সিল : কমিটিতে আসছে এক ঝাঁক নতুন মুখ

মত ও পথ প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল : আসছে এক ঝাঁক নতুন মুখ

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এক ঝাঁক নতুন মুখ যুক্ত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

তাদের মতে, কাউন্সিলের মাধ্যমে ঝরে পড়তে পারেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অর্ধেকেরও বেশি নেতা। দলকে সরকার থেকে পৃথক করতে বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকে হারাতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক ও গণভবন সূত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে।

universel cardiac hospital

নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, এবারের কমিটিতে সর্বোচ্চসংখ্যক নারীকে স্থান দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব শেষ সংশোধিত আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে (সদস্য পদ, ৫ এর ৪ অনুচ্ছেদ) বলা হয়েছে, ‘আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদসহ সকল স্তরের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে। নারী-পুরুষের সমতা আনিবার লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান হারে এই অনুপাত বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকিবে।’

বর্তমানে ৮১ সদস্যের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন নারী রয়েছেন। যা মোট সংখ্যার মাত্র ১২.৯৬ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত বুধবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির বৈঠকে কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেন।

জানা যায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। বিতর্কিতদের নেতৃত্ব থেকে বিদায় দেওয়ার ইঙ্গিত করেন তিনি।

জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদ ছাড়া আওয়ামী লীগের সব পদেই পরিবর্তন আসতে পারে বলে  জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের দপ্তর উপকমিটির সভায় তিনি বলেন, একটা পদে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সেটা হচ্ছে আমাদের পার্টির সভাপতি। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ছাড়া আমরা কেউই দলের জন্য অপরিহার্য না। তিনি এখনো আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং অপরিহার্য। তৃণমূল পর্যন্ত সবাই তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এর পরের পদটা কাউন্সিলরদের মাইন্ড সেট করে দেয়। সেটাও তিনি (সভাপতি) ভালো করে জানেন। আর দল কিভাবে চলবে, কাকে দিয়ে চলবে, সেটাও তিনি জানেন।

এর আগে গত বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর কমিটিতে সম্পূর্ণ নতুন মুখ এসেছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও নতুন মুখ আসবে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের গত ১১ বছরের টানা শাসনামলে পুরো দেশের নেতাকর্মীদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিলিয়ে দেখছেন। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে নেতাদের আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষমতায় থেকেও যেসব নেতা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের এবার মূল্যায়ন করার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। জাতীয় কাউন্সিলে বঞ্চিতদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

কাউন্সিলে কমিটি গঠনের একক ক্ষমতা যেহেতু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়, তাই বরাবরের মতো এবারও তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। কারণ, সভাপতি হিসাবে শেখ হাসিনাই পুনর্নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখনো তাঁর বিকল্প হিসেবে কাউকে মনে করছেন না।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর ৩৪ জনের মধ্যে বাদের তালিকায় রয়েছেন প্রায় অর্ধেক। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসংখ্যা ২৮। কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁদের স্থান দেওয়া যায় না তাঁরা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদ পেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েন ৫০ জন এমপি। আর জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের (মহিলা এমপি) পুরনো ৪৩ জনের মধ্যে ৪১ জনই বাদ পড়েন। পুরনো মন্ত্রিসভার ৪৮ সদস্যের মধ্যে বাদ পড়েন ৩২ জন। সদ্য সমাপ্ত যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সবাইকে পদ হারাতে হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিভিন্ন পদেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

দলীয় সূত্র জানায়, এবারও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে কাউকে কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে চলে যেতে হতে পারে। আবার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সভাপতিমণ্ডলী, সদস্য থেকে সভাপতিমণ্ডলী এবং সম্পাদকমণ্ডলী ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেন কোনো কোনো নেতা। একেবারে নতুন মুখও দেখা যেতে পারে সম্পাদকমণ্ডলীতে।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও আক্তারুজ্জামানের পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডুর ঠাঁই হতে পারে সভাপতিমণ্ডলীতে। সিলেটের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং আক্তারুজ্জামানেরও এরকম সম্ভাবনা রয়েছে। অথবা তাঁদের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে বলে দলের শীর্ষ মহলে আলোচনা রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মধ্যে যেকোনো একজনের ভাগ্য খুলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাগ্য খুলে যাওয়া নেতাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হতে পারে। দীপু মনি শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক হতে না পারলে সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।

আর দলের তরুণ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হতে পারেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান পদোন্নতি পেয়ে সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং দলের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

কমিটিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সাবেক ছাত্রনেতা সুভাষ সিংহ রায়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর, সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক), সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, স্বাচিপ নেতা অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাইনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, বাহাদুর বেপারী, মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ। তাঁরা সম্পাদকমণ্ডলীসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে