নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ঢাকার সবচেয়ে প্রকট ও জটিল সমস্যাটি হলো যানজট। দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে রাজধানীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগের কথা বিভিন্ন সময় শোনা যায়, কিন্তু কোনোভাবেই এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বরং তা আরও প্রকট হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনভিত্তিক জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘নামবিও’ প্রকাশিত ট্রাফিক ইনডেক্স-২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে যানজটের শহর এখন ঢাকা। এর পরই রয়েছে ভারতের কলকাতা শহর। তৃতীয় অবস্থানে নয়াদিল্লি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বাস্তবায়নে রাজধানীর সড়কগুলো সরু করে ফেলা হয়েছে। ফলে বেড়েছে যানজটের ভোগান্তি। আছে আইন না মানার প্রবণতাও। সম্প্রতি অবসরে যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আক্ষেপ করে বলেছিলেন, শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষই যদি আইন না মানে তাহলে পুলিশ কেন, ফেরেশতা নেমে আসলেও আইন প্রয়োগ সম্ভব নয়।
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার দফায় স্বয়ংক্রিয় ও আধা-স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেতের ব্যবস্থা চালু করেছিল সিটি কর্পোরেশন। যদিও রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার না হওয়ায় সবগুলোই একপর্যায়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। এবার রাজধানীর সড়কে বসানো হচ্ছে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সংকেতবাতি’।
পরীক্ষামূলকভাবে এ সংকেত বাতি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থানে বসানোর কাজ সম্পন্ন করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ বাতি নিজ থেকে গাড়ির সংখ্যা শনাক্ত করে সংকেতের জন্য সময় নির্ধারণ করবে। গাড়ির সংখ্যা বুঝে ট্রাফিক সিগন্যাল চালু ও বন্ধের সংকেতও দেবে ডিভাইসটি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটা চালুর কথা।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে পাইলট প্রজেক্টের আওতায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সংকেত বাতি।
ডিটিসিএ প্রদত্ত প্রকল্পটির পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ গণমাধ্যমকে বলেন, গুলশান-১, মহাখালী মোড়, পল্টন মোড় ও ফুলবাড়িয়া মোড়ে আধুনিক এ সংকেতের ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। এতে খরচ হচ্ছে তিন কোটি টাকা।
ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় জাইকা এ খাতে অর্থায়ন করছে। ২০১৫ সালের দিকে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি।
ইলিয়াস শাহ বলেন, সংকেত বাতিগুলো সাধারণ সংকেত বাতি থেকে আলাদা। সাধারণ সিগন্যাল বাতিগুলোতে কত সেকেন্ড পর সবুজ বাতি বা লাল বাতি জ্বলবে, সে সময় নির্ধারণ করা থাকে। তবে এখানে সময় নির্ধারণ করা থাকবে না। ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেমের (আইটিএস) ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাগুলোর মূলত দুটি কাজ। সড়কে থাকা গাড়ির পরিমাণ শনাক্ত করা। তিনশ মিটার দূর পর্যন্ত সড়কে থাকা যানবাহনের ইমেজ ধারণ করা। কোন লেনে কতসংখ্যক যানবাহন চলবে সে সংখ্যা গুণে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত দেবে কোন দিকে গাড়ি চলাচলের জন্য বা বন্ধ করার বাতি জ্বালাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চার স্থানেই ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেমের (আইটিএস) ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। শুধু অ্যাডজাস্টমেন্টের কাজ বাকি। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর উদ্বোধন হবে।
নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে ট্রাফিক সিগন্যাল মেইনটেইনের জন্য পুলিশ লাগবে না। তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। কন্ট্রোল রুম থেকে তারা সবকিছু মনিটরিং করবে। ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে সড়কে যানচলাচল বন্ধের প্রয়োজন হলে ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
- ‘উপাচার্যের কর্মকাণ্ডে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ভুলে গেছেন’
- এসএ গেমস : শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে স্বর্ণ জিতলেন সৌম্য-শান্তরা
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, জবাবদিহিতা নেই বলেই আইটিএসের কথা আসছে। এমন অনেক প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়, বাস্তবায়নও হয়। কিন্তু আলোর মুখ দেখে না, মুখ থুবড়ে পড়ে। এমন উদাহরণ অনেক আছে।
আক্ষেপের সঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাজধানীর সড়কগুলোর যা তা অবস্থা। পরিবহনের সংখ্যাও অনেক বেশি। ফুটপাত দখলে। ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা। অর্থাৎ পুরো সিস্টেমটা যদি আপনি ঠিক না করেন তাহলে তো কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।