বরিশালে ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে পরকীয়া, রিমান্ডে পুত্রবধূ

বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশালে ট্রিপল মার্ডার

বরিশালের বানারীপাড়ায় এক বাড়িতে তিন খুনের ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি কবিরাজ দাবিদার রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল। পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক জানতে পারায় ওই তিনজনকে হত্যা করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন।

বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. এনায়েত উল্লাহর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা এসব কথা জানান। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত শুক্রবার রাতে বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের প্রাবাসী আব্দুর রবের বাড়িতে হত্যা করা হয় প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম (৭৫), খালাতো ভাই মো. ইউসুফ ও ভগ্নিপতি শফিকুল আলমকে (৬৫)। খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রাজমিস্ত্রি জাকির ওই বাড়িতে ভবন তৈরির কাজ করছিলেন। এ সুযোগে প্রবাসী রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর সঙ্গে তাঁর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

মামলার তদারকি কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মাদ আব্দুর রাকিব বলেন, জাকির দাবি করেছেন তিনি নিজ হাতেই তিনজনকে হত্যা করেন। তাকে এ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন প্রাবাসী রবের স্ত্রী মিশু ও তার সহযোগী জুয়েল। মিশু ও জাকিরের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে তারা দাবি করেন।

জবানবন্দিতে জাকির ও জুয়েল দাবি করেন, কয়েক দিন আগে জাকির ও মিশুর অবৈধ মেলামেশার বিষয়টি দেখে ফেলেন প্রবাসীর খালাতো ভাই মো. ইউসুফ। বিষয়টি তিনি তার খালা মরিয়ম বেগম (প্রবাসী রবের মা), বোন ও পরিবারের অন্যদের জানান। এ কথা জানার পর ওই বাড়িতে জাকিরের অবাধ আসা-যাওয়া ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না মরিয়ম বেগম।

এ নিয়ে তিনি বাকাঝকা করেন পুত্রবধূ মিশুকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিশু ও জাকির সপ্তাহখানেক আগে ইউসুফকে হত্যা এবং শাশুড়িকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়িতে ‘জিনের আছর’ পড়ার নাটক সাজান জাকির। সে অনুযায়ী গত শুক্রবার রাতে ওই বাড়িতে ‘জিন তাড়াতে’ জুয়েলকে নিয়ে প্রবেশ করেন জাকির।

পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজমিস্ত্রি জাকির তার সহযোগী জুয়েলকে ঘরের পেছনে গভীর নলকূপের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখেন। জাকির একাই ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে ইউসুফের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মরিয়ম বেগমকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। এরপর পেছনের দরজা খুলে জুয়েলকে ঘরের ভেতর এনে রশি দিয়ে ইউসুফের হাত-পা বেঁধে পুকুরের পারে ফেলা হয়।

এ সময় প্রবাসীর বোন মমতাজ বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কাশি দিয়ে ওঠেন। এতে তিনি জেগে উঠেছেন ভেবে তাকেও বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন জাকির ও জুয়েল।

ঘটনার সময় প্রবাসীর ভাতিজি কলেজপড়ুয়া আছিয়া আক্তার তার দাদি মরিয়মের পাশে ঘুমানো ছিল। আছিয়ার ঘুম ভাঙার পরে দাদিকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে বারান্দায় লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এতে সে চিত্কার দেওয়ার চেষ্টা করলে চাচি মিশু তাকে রুমের ভেতর নিয়ে আসেন। এ সময় সবকিছু জিনে করছে জানিয়ে ভয়ভীতি দেখান।

এরই মধ্যে প্রবাসীর ভগ্নিপতি কাশি দিয়ে উঠলে তার রুমে গিয়ে জুয়েলের সহযোগিতায় জাকির বালিশচাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। এ খুনটি দেখে ফেলে আছিয়া। এ কারণে আছিয়াকে জাকির ছাদে ওঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আছিয়া সিঁড়ি পর্যন্ত গিয়ে চাচির রুমে দৌড়ে চলে আসে।

এ সময় তাকে যৌন হয়রানির ভীতি প্রদর্শন এবং কোরআন শরিফ স্পর্শ করিয়ে প্রতিজ্ঞা করানো হয় মুখ না খোলার জন্য। পুরো হত্যার অভিযানটি রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে ঘটানো হয়।

জাকির জানান, হত্যাকাণ্ডের পর জুয়েলের খরচ বাবদ রাত ৪টা ২১ মিনিটে পাঁচ হাজার টাকা মিশুর বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জাকিরকে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি মিশুর শাশুড়ির কিছু স্বর্ণালংকার জাকিরের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

৩ দিনের রিমান্ডে পুত্রবধূ

তিনজনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ির মালিক প্রবাসী আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে