অনিয়ম, দুর্নীতি এবং আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে চতুর্থ প্রজন্মের নতুন নয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে নয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যাবধানে বেড়েছে ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক নির্দেশনার পরেও শৃংখলার ভিতরে আসেনি তারা। ফলে হুমকিতে পড়েছে এসব ব্যাংক, ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আর্থিক খাত। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র তিন মাস আগে এই খেলাপির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। সুতরাং তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২৮ কোটি টাকা। এক বছর আগেও ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল আরও কম।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই ৯ ব্যাংকের মোট খেলাপি ছিল ৪২২৮ কোটি টাকা। সুতরাং এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নতুন প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ খেলাপি ব্যাংকের তালিকায় পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ৩ হাজার ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে এনআরবি কমাশিয়াল ব্যাংক। ব্যাংকের চলতি সেপ্টেম্বর শেষে ৫০৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ ছিল।
এর আগের বছরের আলোচ্য সময়ে ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংকের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ৩৫৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, ২০১৮ সালের আলোচ্য সময়ে ছিলো ২৩৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ২২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ছিল ৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, আগের বছর ছিল ১১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫৮ কোটি টাকা , যা আগের বছর ছিল ১৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সাউথ ব্যাংলা এগ্রিকালচার আ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ১৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা, গত বছর সেপ্টেম্বর ছিল ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চলতি সেপ্টেম্বর শেষে দাড়িয়েছে ১১৫ কোটি ৬২ লাখ, গত বছরের আলোচ্য সময়ে ছিল ১০২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাড়িয়েছে ১০৪ কোটি ২৪ লাক টাকা, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
উল্লেখ, আলোচ্য সময়ে পুরো ব্যাংকিং খাতেরই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা তৎপরতা ও সুযোগ সুবিধার পরও কমেনি খেলাপি ঋণ; বরং বেড়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১২শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।