সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বদরবারে অনুস্মরণীয় ব্যক্তিদের অন্যতম। শুধু রাজনীতির মাঠে নয় বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে তিনি সাফল্য ও স্বপ্নের বীজ বপণ করে গেছেন। তিনি ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী। সেই স্বাধীনতার পর দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতার কমতি ছিল না। সেই আন্তরিকতার তাগিদে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠন করেন- যা বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি নামে পরিচিত। দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। এর যাত্রাও শুরু হয়েছে ১৯৭২ সালে।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালকে বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের পথিকৃৎ বলা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বন্ধুদের নিয়ে তিনি ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকায় গড়ে তোলেন ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্র’। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা খুকুও একজন ভালো অ্যাথলেট ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের লংজাম্পে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জিতে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে লংজাম্পে নতুন রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন হন খুকু। ১৯৭০ সালে অল পাকিস্তান উইমেন্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে লংজাম্পে মেয়েদের মধ্যে সেরা হন তিনি। ১৯৭৩ সালে ১০০ মিটার হার্ডলসে তিনি প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। ক্রীড়া বিশ্বে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আপন মহিমায় জায়গা করে নিয়েছে।
ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, দাবা, কাবাডি, গলফ, ভলিবল, জুডো-কারাতেসহ সব খেলাই বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা সাফল্য অর্জন করছে। আর এ সাফল্যের অনেকাংশজুড়ে জড়িয়ে আছেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসী দেখেছে কখনো তিনি বিজয়ের মিছিলেও যোগ দিয়েছেন জাতীয় গৌরবের লাল-সবুজের পতাকা হাতে। বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবল এবং ক্রিকেটে সাফল্য লাভ করায় তাদের পুরস্কৃত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোটকথা জাতির পিতার পরিবার খেলাধুলা প্রিয় এবং খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকও। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেটবোর্ডের তত্ত্বাবধানে আজ শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বঙ্গবন্ধু বিপিএল)। আমরা ক্রিকেট বোর্ডের এ আয়োজনকে স্বাগত জানাই।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিবিপিএল) টি২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে এটাই ছিল প্রথম অনুষ্ঠান। ৪০ দিনব্যাপী এ টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মঞ্চ মাতাতে ঢাকায় এসেছিলেন জনপ্রিয় বলিউড তারকা সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফ, সনু নিগম ও কৈলাস খের। দেশি তারকাদের মধ্যে ছিলেন জেমসসহ আরও অনেকে।
এবারের বিপিএল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষভাবে আয়োজন করা হয়েছে। জাতির জনককে উৎসর্গ করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’। বিশেষ বিপিএলকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ কিছু করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ২০১২ সালে প্রথমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশের পেশাদার টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেট লীগ বিপিএল আয়োজন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে বিপিএল আয়োজন বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে সফলতার অন্যান্য গল্পগুলোর একটি।
এবারের আসরের দলগুলো বিসিবি নিজের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করছে। আজ বুধবার দুপুরে মিরপুরে চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং সন্ধ্যায় কুমিল্লা ও রংপুর ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়ায় বিপিএলের সপ্তম আসরের লড়াই। ক্রিকেট বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএল আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাই দেশের ক্রিকেটামোদীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক।
আমরা মনে করি- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আজকে যে নীতিহীন অস্থির সমাজ আমরা লক্ষ্য করি তা থেকে বের হয়ে কাঙ্ক্ষিত সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আর এর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা। আমরা আশা করি ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা যে মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি তার উত্তরোত্তর বিস্তার লাভ করবে বিপিএল এর সফল আয়োজনের মধ্য দিয়ে। দেশের যুব সমাজ, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে খেলাধুলা ও সুস্থ প্রতিযোগীতার মানসিকতা তৈরি হোক এ প্রত্যাশা আমদের।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে খেলাধুলার বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএল সার্থক হোক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু!
- আরও পড়ুন >> অধ্যাপক অজয় রায়ের প্রয়াণে আমরা শোকাহত