অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। আজ গৌরবময় বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভূতি সবসময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও কেননা অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা।
আজ সোমবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্মাদক মুজিবুল হক মুজিব, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি হাজী ইলিয়াস মিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুন্নি আক্তার মুন্নি এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা আক্তারসহ প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে। জনবহুল ও সীমিত সম্পদের এ দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার কাজও সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন দিনগুলোয় রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্র চালু করতে হয়েছিল। এরপর অনেক চড়াই-উৎরাই মোকাবিলা করতে হয়েছে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্মবান। আমাদের সামনে সম্ভাবনা অসীম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সমস্যা মোকাবিলায় সচেষ্ট হলে আমাদের দ্রুত অগ্রগতি হবে। আমরা সে পথেই অগ্রসর হবো- এই হোক বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সুন্দর সময় আমরা এখন পার করছি। গত দুই দশকে বিশ্বে কয়েকবার অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে সারা বিশ্বে যে মহা অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তাতে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার বেশকিছু দেশ চরম খারাপ অবস্থায় পড়ে। আর ২০০৮ সালের বিপর্যয়ে খোদ আমেরিকাসহ অনেক দেশে চরম অবস্থার সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, তখনও আমাদের অর্থনীতি বিপর্যের সম্মুখীন হয়নি। এখন বিশ্বে তৃতীয় বারের মত চরম অবস্থা বিরাজ করছে আর সেটি হচ্ছে তথাকথিত বাণিজ্য যুদ্ধ। চলমান এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের অথনীতিতে নিম্নমুখীতা দেখা দিয়েছে। এতে চীনের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক চার শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অথনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিক খাতে উন্নতি সাধন করে চলেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে আমরা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। চলতি অর্থবছরেই আমরা ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাঁড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে যে কয়েকটি দেশের রপ্তানি আয় খুব দ্রুত বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের হার আগের চেয়ে কমেছে। এটাকে কোনো কল্পকাহিনির মতো মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং তখন কারও কর্মসংস্থানের অভাব থাকবে না।
- আমার লাশের ওপর দিয়ে নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ করতে হবে : মমতা
- ‘অচীন পাখি’ ও ‘সোনার তরী’ ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন
এছাড়া অর্থমন্ত্রী কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সহায়তায় অর্থ অনুদান চেক বিতরণ করেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এসব অনুদান বিতরণ করা হয়।
এ সময় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার, লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।