রাজাকার তালিকা: প্রধান প্রসিকিউটরের নাম ওঠায় সমালোচনা

মত ও পথ প্রতিবেদক

প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু
প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। ফাইল ছবি

গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকার তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নাম ওঠায় নানা মহলে চলছে সমালোচনা। তবে তালিকায় তার নাম লেখা হয়েছে মো. গোলাম আরিফ, অ্যাডভোকেট। নামের শেষাংশে নেই ‘টিপু’। নেই বাবার নামও।

তালিকায় গোলাম আরিফের সঙ্গে আরও দুজন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নাম উঠেছে বলে দাবি পরিবারসহ বিভিন্নজনের। অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেছেন, রাজাকার তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম উঠেছে, আবার বাদ পড়েছে অনেক চিহ্নিত রাজাকারের নাম।

universel cardiac hospital

এ ঘটনায় ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করে অনেকে তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে তালিকায় নিজের ও অন্য দুই আইনজীবীর নাম দেখে বিস্মিত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য গোলাম আরিফ টিপু ২০১৯ সালে একুশে পদক পান।

আর ১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় যে কলামে প্রধান প্রসিকিউটরের নাম এসেছে, সেখানে তার সঙ্গে থাকা অন্য চারজনের মধ্যে দুজন আইনজীবী এবং তৎকালীন রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও একজন মহকুমা পুলিশ সুপারের নাম রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে ১৫ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

তাতে রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের ১৫৪টি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ৮৯ নম্বর তালিকার ৬০০ ক্রমিক নম্বরে গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম রয়েছে। এই ছকের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে- তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল।

অন্য চারজন হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব।

অ্যাডভোকেট মহসিন আলী ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তালিকায় এই দুজনের নাম দেখেও অবাক গোলাম আরিফ টিপু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত, বিস্মিত। এ ধরনের কিছু কী করে ঘটে! রাজশাহীতে গোলাম আরিফ নামে আর কোনো অ্যাডভোকেট আছে কি?, আমি বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিচ্ছি এবং কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমি কোনো দুর্বলতা দেখাতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে ধরনের কাজ করার কথা, তা যথাযথভাবে করতে পারছে না। আমি অন্তত তাই মনে করছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যদি গোলাম আরিফ টিপু, সালাম ভাই, মহসিন ভাইকে রাজাকার বানায়, তাহলে কার কাছে কী বলব! অথচ আমরাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূল শক্তি। ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। আর আজকে আমাকে রাজাকার বানালো হলো?’

কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন,‘চিন্তা করছি। অন্যভাবে সমাধান হলে ভালো। নইলে আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। পাক বাহিনীর তালিকা হতে পারে বলে মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দায় এড়াতে পারবেন না। এই প্রশ্নে আমরা রাষ্ট্রের অবস্থান দেখব।’

এদিকে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছে, আমরা শুধু তা প্রকাশ করেছি। সেখানে কার নাম আছে, আর কার নাম নেই সেটা আমরা বলতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘একই নামে তো অনেক মানুষ থাকতে পারে। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসবে কেন, এটা হতে পারে না। আর যদি আসেও সেটা পাক বাহিনীর ভুল।’

‘যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় এসে থাকে, তবে আমরা সেটা যাচাই করে দেখব’ বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে