সারাবিশ্বে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন ব্যবস্থার কথা বলা হলেও নানাভাবে চলছে শোষণ-নির্যাতন। শুধু মালয়েশিয়াতেই ৬ লাখেরও অধিক অভিবাসী প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব অভিবাসীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।
২০১৬ সালে ‘রিহায়ারিং প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মালয়েশিয়া সরকার। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৮ সালে। তিনটি ভেন্ডরের মাধ্যমে প্রকল্পটি পরিচালনা করে দেশটির কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। তারা প্রতিজন অভিবাসীর কাছ থেকে ৬ হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার) জমা নেয়।
ওই প্রকল্পে ৭ লাখ ৪৪ হাজার অভিবাসীদের কাছ থেকে টাকা জমা নেয়া হলেও ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার অভিবাসীকে। মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাকি ৬ লাখ ৩৪ হাজার অভিবাসীকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়নি। এমনকি পরবর্তীতে তাদের টাকাও ফেরত দেয়া হয়নি। এখন তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার ফ্রি-মালয়েশিয়া টুডে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত সেই খবরে বলা হয়, সংস্থাটির হিসেবে বৈধতা না পাওয়া অভিবাসীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।
বেসরকারি ওই সংস্থার পরিচালক জোসেফ পল মালাইমফ বলেন, ‘টাকা দিয়েও এসব অভিবাসী বৈধতা পাওয়া তো দূরের কথা, তারা তাদের পাসপোর্টও হারিয়েছেন। টাকা আর পাসপোর্ট দুটোই ভেন্ডররা হজম করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার কোনো দায় নিতে চায় না। আবার ভেন্ডররাও সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছে। যার ফলে ৬ লাখেরও বেশি অভিবাসী হয়রানির শিকার হয়েছেন।’
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, ৬ লাখেরও অধিক অভিবাসী হয়রানির শিকার হলেও তাদের দায় না নিয়ে উল্টো এসব অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। গত ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি শেষ হতে মাত্র আর কয়েকদিন বাকি।
এদিকে গত ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০১ জন অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩৯ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন।
দেশে ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ৫৩ হাজার ৩০২৮ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের ৩৮ হাজার ৭৩৪ জন। এছাড়া ভারতের ২২ হাজার ৯৬৪ ও মিয়ানমারের ৬ হাজার ৯২৩ জন। বাকিরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক।