মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে আলোচনার লক্ষ্যে কুয়ালালামপুর সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকারখ্যাত বর্ষীয়ান এ রাষ্ট্রনেতা বলেন, এই সম্মেলন কোনো দেশের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ কিংবা বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে নয়। এটি কেবলমাত্র এমন প্রস্তাব ও সমাধান নিয়ে আসার চেষ্টা যা কি-না মুসলিম বিশ্বে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর হবে।
প্রথমবারের মতো ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির বাইরে গিয়ে বিশ্বের প্রধান প্রধান মুসলিম রাষ্ট্রের নেতাদের এক জায়গায় একত্র করেছে মালয়েশিয়া। তবে সৌদি আরব সম্মেলনটি বর্জন করেছে। আর সৌদির অনুরোধে পাকিস্তানও এই সম্মেলনে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে উদীয়মান প্রভাববিস্তারি দেশ ইরান ও বিশ্বরাজনীতিতে ফের মাথা তুলে দাঁড়ানো তুরষ্কসহ বিশ্বের বেশ কিছু মুসলিম দেশের নেতারা ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে মাহাথির বলেন, ‘আমরা ছোট আকারে শুরু করেছি। যদি এই ধারণা ও সমাধানের প্রস্তাবগুলি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী হয়, তাহলে এটিকে বিবেচনার জন্য বড় প্লাটফর্মে নিয়ে যেতে আমি আশাবাদী।’
‘এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা নয়। বরং মুসলিম বিশ্বের সংকটের বিষয়গুলি আমরা আলোচনা করবো। আমরা দেখছি মুসলিম দেশগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নাগরিকরা দেশ ছেড়ে অমুসলিম দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।’
এই সংকট মুসলিম রাষ্ট্রগুলির সংকট মন্তব্য করে মাহাথির বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার মুসলিম মৃত্যুবরণ করছে। অনেকে অভিবাসী হিসেবে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে। অন্যদিকে আমরা দেখি যে, মুসলমানরা সহিংস কাজকর্ম করছে, নিরীহ পুরুষ, মহিলা, শিশু, অসুস্থ এবং অক্ষমদেরও হত্যা করছে।’
বিশ্বজুড়ে ইসলামোফোবিয়া কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখানে আলোচনার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভুলগুলো খুঁজে পেতে পারি এবং সম্ভবত সমাধানও খুঁজে পেতে পারি। যদি সেটিও সম্ভব না হয় তাহলে এর মাধ্যমে আমরা মুসলিম বিশ্বকে জাগিয়ে তুলতে পারি। মুসলিম উম্মাহর সমস্যা ও তার কারণগুলি চিনতে পারার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
‘মুসলিম বিশ্বকে উন্মত্ত যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ব্যর্থ সরকার এবং অন্যান্য অনেক বিপর্যয়ের মোকাবেল করতে হয়েছে, যেগুলি মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামকে শেষ করে দেওয়া বা হ্রাস করার কাজ করেছে। আমরা দেখেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়া দেশ শুধুমাত্র নিজেদের পুনরুদ্ধারই নয়, বরং উন্নত হওয়ার জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়েছে।’
‘কিন্তু কয়েকটি মুসলিম দেশ সুশাসনে অক্ষম, উন্নতি ও সমৃদ্ধি অনেক কম। এটা কি আমাদের ধর্মের পথে চলছে? ইসলাম কি পার্থিব সাফল্যের বিরুদ্ধে এবং একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার বিরোধী? মুসলমানরা কি নিজেদের দেশগুলিকে সুশাসিত হতে, উন্নত হতে বাধা দেয়?’
সমস্যা ও তার কারণগুলি বুঝতে পারা গেলে মুসলিম উম্মাহর জন্য যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তা কাটিয়ে ওঠার পথ আলোকিত করতে পারে বলেও মত তুলে ধরেন সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাহাথির।
- রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস দিয়েছে গ্রামীণফোন: টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
- নাগরিকত্ব আইন: ভারতে বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা
কুয়ালালামপুর সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি অংশ নিচ্ছেন।
মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আব্দুল্লাহর ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই সম্মেলন। সামিটের অংশ হিসেবে গত বুধবার মুসলিম বিশ্বের যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইসলামভীতি মোকাবেলাসহ মুসলিম বিশ্বের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।