৭ হাজারের বেশি স্থাপনা উচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে দখলমুক্ত মিরপুরের দুয়ারিপাড়া

মহানগর প্রতিবেদক

উচ্ছেদ অভিযান

দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ভাবে দখল করে রাখা বিপুল পরিমাণ জায়গা উদ্ধার করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। সাত হাজারের বেশি স্থাপনা উচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে উদ্ধার হয়েছে প্রায় দেড় লাখ বর্গ ফুট আকারের জায়গা।

আজ রোববার মিরপুরের রূপনগর দুয়ারিপাড়া এলাকায় বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে  গৃহায়ণ ও গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ জায়গাটি নিজেদের দখলে নেয়।

universel cardiac hospital

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত  কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফজিলাতুন্নেসা ওয়াকফ এস্টেট নামে এই জায়গাটিতে ৪৭৪টি প্লট ছিল। এসব প্লটে আবাসিক ও বানিজ্যিক স্থাপনা ছিল সাত হাজারের বেশি। বিশাল আয়তনের এ জায়গাটিতে বসবাসকারীর সংখ্যাও ছিল ৪০ হাজারের বেশি।

এই ৪৭৪টি প্লটকে বিভিন্ন কায়দায় ভেঙে সাতশোতে রূপ দিয়েছে স্থানীয় একটি মহল। দেড় হাজার বর্গফুট আকারের সাত শতাধিক প্লটের প্রতিটিতে গড়ে ৯ থেকে ১০ করে পরিবার বসবার করত। পাশাপাশি এসব স্থাপনার সামনে ছিল দোকানপাট, চাল, মাদুরসহ নানা পণ্যের গুদাম।

সকাল সাড়ে ১১টায় পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী অভিযানে নামে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একযোগে পুরো এলাকায় উচ্ছেদ পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘটনাস্থলে চার শতাধিক পুলিশ ও একশ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। দিনব্যাপী অভিযানে পুরো এলাকাটি উদ্ধারে সক্ষম হয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে বেদখল জায়গাটি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

অভিযানের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শাহীন মিয়া জানান, গণপূর্তের অধীনে ৪৭৪টি প্লট রয়েছে। আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের আগে মাইকিংয়ের মাধ্যমে এখানকার সবাইকে অবগত করা হয়েছে।

এদিকে উচ্ছেদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার বসবাসকারীরা। তাদের ভাষ্য, মাত্র তিন দিন আগে তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে অধিকাংশ বাসিন্দা সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি উচ্ছেদকালে অনেকেরই আসবাসপত্র ও মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এদিকে চোখের পানি ফেলে আহাজারি করেছেন সত্তর বছর বয়সী সমের্ত বেগম। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ঘরের মালামাল অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কিছু বের করতে পারি নাই। এখন আমাগো যাওয়ার জায়গা নাই। আমার ঘরে ১০ জন মানুষ। এতোগুলা মানুষ নিয়ে কই যামু? কম টাকায় বাসা এদিকে আর নাই।

আবার উচ্ছেদের পক্ষেও কথা বলেছেন এখানকার কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে যারা থাকত, তারা বেশি ভাগই নেতাদের ম্যানেজ করে থাকত। তাদের টাকা দিত। দুই তিনটা প্লটের আধা কাটা করে জমি নিয়ে আলাদা জমি বানাইত। সেটা আবার বিক্রি করত। এভাবেই সব চলত।

তিনি বলেন, এখানে তো উচ্ছেদ এই প্রথম না। আমি ১৯৯৭ থেকে এখানে থাকি দুই-তিন বার উচ্ছেদ করছে। শেষ বার ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও একবার উচ্ছেদ করছে। এরা যায়, আবার ফেরত আসে। এইবারও তো তিন দিন আগে থেকে মাইকিং করল।

জানে আলম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এখানে যারা থাকে তারা জানে, তারা বৈধ না। তাই তাদের কোনো প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ নাই।

সূত্র জানায়, জায়গাটি লিজ নেয়া হলেও সেসময় পার হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী আমীর হোসেন মোল্লা ২০১১ সালে বিভিন্ন জনের কাজে এসব জমি হাত বদল করেন। যার বিনিময়ে হাতিয়ে নেন বড় অংকের টাকা। আমীর মোল্লা স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা হলেও চার বছর আগে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়।

দীর্ঘ সময় পর সরকারের জমি সরকার বুঝে নিতে চাইলে ঘর ছাড়া হন এখানে বসবাস ও ব্যবসায়ীরা। অভিযান শেষে দেখা যায়, বসবাসকারীদের মধ্যে কয়েকশ পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশপাশে কম ভাড়ায় বাসা না পাওয়ায় তাদেরকে স্থানীয় স্কুল মাঠে অবস্থান করতে হচ্ছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে