বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিধিনিষেধের কারণে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছোটখাটো ড্রোন উড়ানো এতদিন সহজতর ছিল না। যদিও কেউ কেউ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র ড্রোন উড়িয়েছেন। তবে এবার সহজ হচ্ছে বাড়ির ছাদে বা নির্দিষ্ট খোলা জায়গায় ড্রোন উড়ানো।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জনস্বার্থে ড্রোন উড়ানো আরও সহজ করতে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। যা ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’ নামে পরিচিতি পাবে।
এটি অনুমোদন পেলে সহজ হয়ে যাবে ড্রোন উড়ানো। নতুন নীতিমালায় ছোট, হালকা ওজনের ড্রোন নির্ধারিত কিছু জায়গায় উড়াতে অনুমতির প্রয়োজন হবে না। নীতিমালা অনুসারে- ছোট ড্রোন ব্যতীত ভারী ড্রোন শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধনের সুযোগ করে দেয়া হবে। নিবন্ধন সম্পর্কিত কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘ড্রোনের ব্যবহার নিশ্চিত এবং নিয়ন্ত্রণ করতে নীতিমালা খুবই জরুরি ছিল। দেরিতে হলেও এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা পাচ্ছি। এটি খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ।’
যা আছে ড্রোন উড়ানোর নীতিমালায়-
নীতিমালায় ড্রোনের ব্যবহারকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এ শ্রেণিগুলো হলো- বিনোদনের জন্য; শিক্ষা-গবেষণার মতো অ-বাণিজ্যিক কাজে; সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সার্ভে, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ইত্যাদি বাণিজ্যিক ও পেশাদার কাজে ব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার।
সকল ধরনের ড্রোনের বর্তমান দাম জেনে নিতে পারবেন বিডিস্টল.কম থেকে।
নীতিমালায় বিনোদন বলতে বোঝানো হয়েছে- আমোদ-প্রমোদ, গ্রুপ বা ব্যক্তিগত ছবি তোলা, শিশুদের খেলনা, অপেশাদার পরিচালনা প্রশিক্ষণ ও শখ ইত্যাদি কারণে ব্যবহার। এ ক্ষেত্রে গণমানুষের ক্ষতি ও রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ড্রোনের মালিককে। নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের জন্য কিছু শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ড্রোন উড়ানোর অনুমতি মিললেও ড্রোন আমদানি নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ড্রোন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারের আমদানি নীতিমালা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পদ্ধতিতে ড্রোন আমদানি করা যাবে। তবে ১৫ কেজির বেশি ওজনের ড্রোন হলে আমদানির ছয় মাস আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। নতুন নীতিমালায় আমদানি করা ড্রোন বেবিচক নিবন্ধন করে পরিচিতি নম্বর প্রদান করবে। যা ড্রোনের গায়ে দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শন করতে হবে। তবে নীতিমালায় রাষ্ট্রীয়, সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ড্রোন আমদানি অনুমতি ও নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়নি।
একই সঙ্গে ক- শ্রেণির (বিনোদনের জন্য) ড্রোন ১৫ কেজির বেশি ওজন বা ২০০ ফুটের বেশি উপরে উড়তে সক্ষম এমন হলে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। নীতিমালা অনুসারে গ্রিন জোনভুক্ত এলাকায় ড্রোন উড়াতে কোনো অনুমতি লাগবে না। তবে সেক্ষেত্রে কিছু শর্ত মানতে হবে ব্যবহারকারীকে। বিমানবন্দর/কেপিআই এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ৫০ ফুটের অধিক, পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ১০০ ফুটের অধিক এবং ১০ কিলোমিটার ভেতরে ২০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না।
তবে ইয়োলো জোনে ড্রোন ওড়াতে অনুমতি লাগবে। নীতমালায় সংরক্ষিত এলাকা, সামরিক এলাকা, জনসমাগমের স্থানকে ইয়োলো জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, রেড জোনে ড্রোন ওড়াতেও বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হবে। নীতিমালায় এয়ারপোর্ট, কেপিআই, নিষিদ্ধ স্থান, বিপজ্জনক স্থানকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ড্রোন ওড়ানোর অনুমোদন প্রসঙ্গে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ছয়টি সংস্থার অনাপত্তি পাওয়ার পর বেবিচক ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি দেবে। সংস্থাগুলো হচ্ছে– আকাশ প্রতিরক্ষা পরিচালন কেন্দ্র, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদফতর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বিমান গোয়েন্দা পরিদফতর, পুলিশ সদর দফতর এবং বর্ডার গার্ড সদর দফতর।