জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পত্নী এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করছে দলটি। সেই পদের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’। তিনি বর্তমানে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকছেন জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির নবম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগের দিন আজ শুক্রবার দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক শেষে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
রাঙ্গা বলেন, এবারের মূল পরিবর্তন হচ্ছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিনী রওশন এরশাদ ‘চিফ প্যাট্রন’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দলে উনার সম্মান থাকবে সর্বোচ্চ। মিটিং বা সাধারণ সভা- সবখানেই উনার এই সর্বোচ্চ সম্মানটা থাকবে। দলের সর্বক্ষেত্রে রওশন এরশাদের অবস্থান দলের চেয়ারম্যানের ঊর্ধ্বে থাকবে, এটা মাননীয় চেয়ারম্যান বলেছেন।
পার্টির গঠনতন্ত্রে আরও অনেক ধারায় পরিবর্তন আসতে পারে জানিয়ে রাঙ্গা বলেন, প্রেসিডিয়ামের সভায় দলের নেতারা পরিবর্তনের দাবি এনেছেন। পরে পরিবর্তন, সংযোজন, পরিবর্ধনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যানকে।
জাতীয় পার্টিতে এখন ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য রয়েছেন। বৈঠকে এই সংখ্যা কমিয়ে আনার পক্ষে মত এসেছে বলে জানান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, প্রেসিডিয়ামে সদস্য সংখ্যা কমবে না বাড়বে সে সিদ্ধান্ত শনিবার দলের নবম কাউন্সিলের পর নেবে জাতীয় পার্টি। তবে কাউন্সিলে ‘চার-পাঁচজনকে’ দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের পদে আনা হতে পারে।
জাতীয় পার্টির বেশক’টি সহযোগী সংগঠন কাউন্সিলে অঙ্গ-সংগঠনের স্বীকৃতি পাবে বলেও জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের বাইরে খোলা জায়গায় হবে দলটির কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
দুপুরে মিলনায়তনের ভেতরে হবে ভোটাভুটি। জাতীয় পার্টির কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের মৌখিক ভোটে চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নেতা নির্বাচন করা হবে। জাপার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের মার্চে জাতীয় পার্টির অষ্টম কাউন্সিলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার ভাই জি এম কাদেরের জন্য ‘কো চেয়ারম্যান’ পদ সৃষ্টি করেন। এ সময় স্ত্রী রওশন এরশাদ ক্ষিপ্ত হলে তার জন্য সৃষ্টি করেন, ‘সিনিয়র কো চেয়ারম্যান’ পদ। তখন থেকে রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
চলতি বছর ৫ মে এরশাদ ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। পরে ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এরশাদ।
এর তিন দিন পর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।
এরপরই রওশন এরশাদ অনুসারীরা রওশনকে পাল্টা দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আনা হয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ।
৮ সেপ্টেম্বর মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন। আর রওশন এরশাদ হবেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা।