ভারতজুড়ে চলমান বিক্ষোভের মধ্যেই প্রথমবারের মতো কেরালার বিধানসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে প্রস্তাব পাস হয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বছরের শেষ দিনে নাগরিকত্ব আইন বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে বিধানসভায় এক দিনের বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন বিধানসভার সদস্যরা।
কেরালার ক্ষমতাসীন দল সিপিআই-এলডিএফ এবং বিরোধী দল কংগ্রেস-ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) সদস্যদের সম্মতিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েচে। তবে একমাত্র বিজেপি’র এমএলএ এবং সাবেক ইউনিয়ন মন্ত্রী রাজাগোপাল প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছেন।
রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ানের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব আইনের ঘটনায় সমগ্র দেশের মানুষ শোকাহত এবং তারা সর্বত্র এ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেরালায় কোনো বন্দিশালা তৈরি করা হয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য ভারত সর্বত্র পরিচিত। নতুন নাগরিকত্ব আইন দেশের জনগণের ওপর জুলুম করবে। ভবিষ্যতের জন্যে এই আইন রাখার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এ কারণে নাগরিকত্ব আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত।’
নতুন আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যেসব নির্যাতিত ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে মুসলিমরা এই আইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
কেরালার বিধানসভায় নাগরিকত্ব আইন বাতিলের প্রস্তাবনাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেন বিজেপি দলের সংসদ সদস্য রাজাগোপাল।
রাজাগোপাল প্রশ্ন করেন যে, সব কিছু বিশ্লেষণের পরে নাগরিকত্ব বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে, সেখানে বিধানসভায় তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কীভাবে সম্ভব?
অন্যদিকে প্রস্তাবনার পক্ষে প্রধান বিরোধী দলের নেতা রমেশ বলেন, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জর্পূণ কাজ হচ্ছে নাগরিকত্ব আইন।
তিনি বলেন, ভারত রাতারাতি আজকের পর্যায়ে পৌঁছায় নি। বরং হাজার বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সিদ্ধান্তের পরে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে ভারত। সবকিছু সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ করে স্বাধীন ভারতের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ার পর ইতোমধ্যে ছয় বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই ধর্মের ভিত্তিতে সংবিধানে কোনো বিধান যুক্ত করেননি। কিন্তু বর্তমানে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিধানসভায় মোট ১৪০ জন সদস্যের মধ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর একটি আসনে প্রতিনিধি রয়েছে।