ঢাবি প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার জন্য প্রক্টরকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন।

সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য ১২টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত। ১২টি সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, স্বতন্ত্র জোট ও ছাত্র গণমঞ্চ।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

১. ভিপি নুরুল হক নুরসহ সব শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনানুগ বিচার করতে হবে।

২. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরকে অপসারণ করতে হবে।

৩. ডাকসুতে হামলায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

৪. হামলায় আহতদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হলে হলে দখলদারিত্ব, গেস্টরুম-গণরুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছি যে, ডাকসু ভবনে নৃশংস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ আহত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি। উপরন্তু আহতদেরই দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত।’

ভিসির উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, এস এম হলে, বিজয় ৭১ হলসহ ক্যাম্পাসে বারবার নুরুল হক নুরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করা হচ্ছে। কিন্তু হামলাকারীরা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ফলে সহিংসতা বেড়েই চলছে। যার দায়ভার প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

আপনি জানেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতায় আবুবকর, হাফিজুর মোল্লাসহ অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে হল প্রশাসন বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সন্ত্রাসী দখলদারদের কাছে জিম্মি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনেক ঘটনা প্রতিদিন ঘটে, যা তারা প্রশাসনের কাছে প্রকাশ করার মতো নিশ্চয়তাও পান না। সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের পক্ষ নিতে গিয়ে প্রতিটি ঘটনায় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি আবাসিক হলে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব জারি রেখে, ছাত্রদের গেস্টরুমে ম্যানার শেখানোর নামে ভয় দেখিয়ে গেস্টরুমগুলোকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করেছে। গেস্টরুম নির্যাতনে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা ঢাবির শিক্ষার পরিবেশকে দীর্ঘস্থায়ী আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

শিক্ষাঙ্গনের এমন অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। ছাত্রদের মতপ্রকাশের অধিকার ভুলুণ্ঠিত। মত প্রকাশ করা একজন ছাত্রের স্বাভাবিক অধিকার হলেও বুয়েটের আবরার ফাহাদকে স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে বেশকিছু শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।

ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করা হয়েছে। সেই হামলার দিন আমাদের নেতারা প্রক্টরকে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নৃশংসতা বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়ার কথা বললেও উনি যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হননি, তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন। তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে হামলাকারীদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তার এ আচরণ এটা স্পষ্ট করে যে, তিনি হামলাকারী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মদদদাতা এবং হামলার সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন। অর্থাৎ ছাত্রদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রক্টর দায়িত্ব পালনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এরকম পক্ষপাতদুষ্ট নির্লজ্জ একজন ব্যক্তি কোনোভাবেই প্রক্টরের পদে বহাল থাকতে পারে না।

আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি লাগানো হয়েছে অথচ সেই সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রক্টরিয়াল প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

এমতাবস্থায়, আমরা আপনার মাধ্যমে অবিলম্বে নিম্নোক্ত ৪ দফা দাবির বাস্তবায়ন চাই। অন্যথায়, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।

আমরা ক্যাম্পাসে চলমান সন্ত্রাস দখলদারিত্ব ও সহিংসতার অবসানের জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রসমাজের স্বার্থে আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ১২টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য’ গঠন করেছি। যেকোনো সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা আমাদের লড়াই-সংগ্রাম পরিচালনা করবো।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে