শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে সুপার ওভারে শেষ হাসি কুমিল্লার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কুমিল্লার জয়
ফাইল ছবি

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াই বিনোদনের সব পসরা যেন সাজিয়ে বসেছিল। মূল ম্যাচে শেষতক হলো টাই, সিলেট থান্ডার আর কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের লড়াইয়ে জিতলো না কোনো দলই। ম্যাচ গড়ালো সুপার ওভারে।

সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাটিং করে সিলেট থান্ডার। দলের পক্ষে ব্যাটিংয়ে নামেন আন্দ্রে ফ্লেচার আর শেরফান রাদারফোর্ড। আর কুমিল্লার হয়ে বল হাতে নেন মুজিব উর রহমান। আফগান অফস্পিনারের ওই ওভারে প্রথম বলটিতে ফ্লেচার বাউন্ডারি হাঁকালেও পরে আর তেমন কিছুই করতে পারেননি। সুপার ওভারে সিলেট তুলতে পারে মাত্র ৭ রান।

লক্ষ্য ৮ রানের। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের পক্ষে ব্যাটিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার আর ডেভিড উইজ। সিলেটের বোলার ছিলেন নাভিন উল হক। প্রথম বলে ২ রান নেন ডেভিড উইজ। পরের বলে একটি লেগবাই। তৃতীয় বলে স্ট্রাইকে এসেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে রনি তালুকদারের ক্যাচ হন সৌম্য সরকার।

শেষ ৩ বলে কুমিল্লার দরকার ৫ রান। স্ট্রাইকে তখন ডেভিড উইজ। নাভিনের চতুর্থ বলটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনিই ম্যাচটা বের করে নেন। এক বল হাতে রেখেই সুপার ওভারে শেষ হাসি হাসে কুমিল্লা।

এদিন মূল ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে সিলেটের সামনে ১৪১ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় কুমিল্লা। এর জবাব দিতে নেমে ভূতুরে শুরু হয় সিলেটের। ইনিংসের প্রথম ওভারে ০ রানে থাকা জনসন চার্লসকে আউট করেন স্পিনার সানজামুল ইসলাম। দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানেন মুজিব উর রহমান। ২ রানে ফেরান আরেক ওপেনার রনি তালুকদারকে।

এরপর দৃশ্যপটে আসেন পেসার আল আমিন হোসেন। ইনিংসের সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত বল করতে এসে মোহামম্দ মিঠুন (১৩)ও রাদারফোর্ড (১৫) উইকেট তুলে নেন তিনি। পরের ওভারেই ১ রান করে ডেভিড উইজের শিকারে পরিণত হন আন্দ্রে ফ্লেচার। ফলে মাত্র ৩৩ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে সিলেট।

তবে শেষ চেস্টা করেছিলেন সোহাগ গাজী। নাজমুল হোসেন মিলনকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৭০ রানের পার্টনারশীপ। এরই এক ফাঁকে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজের প্রথম ফিফটি। ২৯ বলে পাওয়া অর্ধ-শতকটি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান সাজিয়েছেন ৩টি চার ও ৪টি ছয়ের মাধ্যমে।

পরে মিলন ২৩ বলে ১৩ ও গাজী ৫২ রানে আউট হলে শেষ ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য প্রয়োহজন হয় ১৫ রান। শেষ বলে ৩ রান। সেসময় আল-আমিন ওয়াইড ডেলিভারিতে ১ রান দিলে শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন মনির হোসেন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। কুমিল্লার হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন দুই ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা ও স্ট্যিয়ান ভ্যান জিল। যেখানে প্রথম চার ওভারে ৪২ রান যোগ করেন দুজন। ১০ রানে থাকা ভ্যান চিলকে আউট করে ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙেন পেসার এবাদত হোসেন। তিন নম্বরে এসে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সৌম্য, ফিরেছেন মাত্র ৫ রানে।

এরপর ইয়াসির আলী (৫) ও ডেভিড উইজ (১০) দ্রুত আউট হয়ে গেলে ১১০ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে কুমিল্লা। কার্যত ওখানেই শেষ হয়ে যায় কুমিল্লার বড় সংগ্রহের স্বপ্ন। সুবিধা করতে পারেননি সাব্বির রহমানও। অনেকটা টেস্টের ধরণে ব্যাটিং করে রাদারফের্ডের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। এর আগে ২৫ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলে যান সাব্বির।

রাদারফোর্ডের বলে খানিকবাদেই আবু হায়দার রনি ৭ রানের মাথায় বদলি খেলোয়াড় শফিউল্লাহ শাফাকে সাজঘরে ফেরান।

শেষ দিকে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ১৪ বলে ১৯ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করে কুমিল্লা।

সিলেটের হয়ে রাদারফোর্ড এবং পেসার এবাদত হোসেন নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়াও সোহাগ গাজীে নেন ২টি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ১৪০/৯ (২০), থারাঙ্গা ৪৫, ভ্যান জিল ১০, সৌম্য ৫, সাব্বির ১৭, রাব্বি ৫, ওয়াইজ ১৫, অঙ্কন ১৯*, রনি ৭, সানজামুল ০, মুজিব ৩; এবাদত ৪-০-৩৩-৩, গাজী ৩-০-২৩-২, রাদারফোর্ড ৪-০-১৯-৩।

সিলেট থান্ডার: ১৪০/১০ (২০), চার্লস ০, রনি ২, মিঠুন ১৩, রাদারফোর্ড ১৫, ফ্লেচার ১, মিলন ১৩, গাজী ৫২, নাইম ১৫, মনির ১৬, এবাদত ৩*; সানজামুল ৪-০-২৪-১, মুজিব ৪-০-১২-৪, ওয়াইজ ৪-০-৩১-১, আল আমিন ৪-০-৩০-২।

সুপার ওভারে সিলেট থান্ডার: ৭/০, ফ্লেচার ৬, রাদারফোর্ড ১; মুজিব ১-০-৭-০।

সুপার ওভারে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ৮/১ (০.৫), ওয়াইজ ৭, সৌম্য ০, থারাঙ্গা ০*; নাভিন ০.৫-০-৭-১।

ফলাফলঃ সুপার ওভারে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স জয়ী।

ম্যাচসেরাঃ মুজিব উর রহমান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে