ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রকেট হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৮জন নিহত হয়েছে। ওই হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের এলিট কুর্দস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হয়েছেন।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, বাগদাদের বিমানবন্দরে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সোলেইমানিও ছিলেন।
ইরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স রয়টার্সকে জানিয়েছে, জেনারেল সোলেইমানি এবং ইরাকি মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল মুহানদিস নিহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই সোলায়মানিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেনারেল সোলাইমানির গাড়িবহর লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলায় সোলাইমানিসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।
পেন্টাগনের বিবৃতিতে বলা হয়, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনকে রক্ষায় প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় ইরাকে সোলাইমানিকে হত্যা করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
পেন্টাগনের ভাষ্য, ভবিষ্যতে ইরানের হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতেই জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেকোনো স্থানে তার লোকজন ও স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে।
সোলাইমানির নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ছবি টুইট করেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ ও ‘বোকামি’ বলে বর্ণনা করেছেন।
সোলাইমানি নিহত হওয়ার জেরে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে।
এর আগে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগন দাবি করে, জেনারেল সোলাইমানির অনুমোদনেই ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছে।
জেনারেল সোলাইমানিকে সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ মনে করা হচ্ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো সমরজগতের বিশেষ নজরে ছিলেন। সিআইএ-মোশাদের হিটলিস্টে সোলাইমানি ছিলেন বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলেসি’ জার্নাল ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি তালিকা করে। এই তালিকার সমর খাতে জেনারেল সোলাইমানিকে প্রথম স্থানে রাখা হয়। মার্কিন প্রশাসন এই ইরানি জেনারেলকে একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল। তিনি মার্কিন সরকারের কালো তালিকায় ছিলেন। তিনি ইসরায়েল ও সৌদি আরবেরও মাথাব্যথার কারণ ছিলেন।
জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাসেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তাঁর পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল।
রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস্ ফোর্স’ সোলাইমানির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছিল। ২১-২২ বছর ধরে বাহিনীটি গড়ে তোলেন তিনি।
‘কুদস্ ফোর্স’ অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশান ইউনিট’। এই ফোর্সের প্রধান কর্মক্ষেত্র মূলত ইরানের বাইরে। কুদস ফোর্স ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন সোলাইমানি।
সোলাইমানি তাঁর বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লব-উত্তর ইরানে এই খেতাব তিনিই প্রথম পান।