মালয়েশিয়া পালানোর চেষ্টা করেছিলেন এনু ও রূপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এনু -রূপন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে গেন্ডারিয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোকাণ্ডের মূল হোতা এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়া বঙ্গোপসাগর দিয়ে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, দুই ভাইয়ের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি।

আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের এ তথ্য জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ। রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দুই ভাই ভুয়া পাসপোর্টে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলে দুই ভাই সড়ক পথে ভারত হয়ে নেপাল পালানোর পরিকল্পনা করেন। তবে, পালানোর আগেই তারা ধরা পড়লেন। সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তার এনু গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রূপন ভূঁইয়া গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া অভিযানে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও অর্থ জব্দের পর তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে যে নয়টি মামলা হয়, সেগুলো তদন্তের ভার সিআইডির কাছে আসে। নয়টির মধ্যে চারটি মামলার এজাহারেই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার নাম দেখা যায়। মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করি এবং সকালে কেরাণীগঞ্জে তাদের এক সহযোগীর বাড়ি থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিআইডির তদন্তে ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাইয়ের সম্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুইজনের মোট ২২টি জমি ও বাড়ি রয়েছে, যার অধিকাংশই পুরান ঢাকায়। এছাড়া সারাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৯১টি অ্যাকাউন্টে তাদের মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ব্যক্তিগত পাঁচটি গাড়িও রয়েছে দুই ভাইয়ের। সেপ্টেম্বরে দুইজনের বাড়িতে অভিযানের সময় ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো ব্ল্যাকমানি (কালো টাকা)। দেশের বাইরে পাচার করতে তারা সেগুলো রেখেছিলেন। রিমান্ডে নিয়ে দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করেন সিআইডির এই কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যখন তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়, তারা তা আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে কক্সবাজার চলে যান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- নৌযানে অবৈধভাবে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাবেন। তবে ওই চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় দুইজন নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তারা ঢাকায় এসে কেরাণীগঞ্জে মোস্তফা নামের এক সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করেন। সেখান থেকে বেনামি পাসপোর্ট তৈরি করে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন দুই ভাই। বেনামি পাসপোর্ট ও ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকা সঙ্গে রেখেছিলেন তারা। তাদের গ্রেফতারের সময় এই ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা জেনেছি এই দুজনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ক্যাসিনো কারবারের গোড়াপত্তন হয়। নেপালিদের মাধ্যমে তারা ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বাংলাদেশে এনেছে। এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ সেপ্টেম্বর এনামুলের শেয়ার থাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ২০ সেপ্টেম্বর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেদিন রাতে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

২২ সেপ্টেম্বর আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর অভিযান চলে ফু-ওয়াং, পিয়াসী ও ড্রাগন বারে। এসব অভিযানে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে