নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি যারা প্রণয়ন করেছেন, তারাই এখন এর বিরোধিতা করছেন।’
সোমবার দুপুরে এক আন-অফিসিয়াল নোটের মাধ্যমে বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম ও দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেনকে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, সম্প্রতি সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ দাবি করেন, ‘ইসি তাদের সম্মতি দিয়েছে যে, সংসদ সদস্যরা ঘরোয়া আয়োজনে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন।’
এ প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে সংসদ সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন বলে বিগত ৯ জানুয়ারি আন-অফিসিয়াল নোটের মাধ্যমে আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার সেই উদ্বেগ বর্তমানে আরও ঘণীভূত হয়েছে। কারণ গত কয়েক দিনে বিধিমালা নিয়ে নানাপ্রকার বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
তিনি মনে করেন, ‘বিদ্যমান আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন সম্পর্কিত যেকোনো কমিটিতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। নির্বাচনী কার্যক্রম ঘরে বা বাইরে যেকোনো স্থানে হতে পারে। এ বিষয়ে আচরণবিধিমালা, ২০১৬- এর বিধান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। সর্বাধিক দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এ বিধিমালা যারা প্রণয়ন করেছেন, তারাই এখন এর বিরোধিতা করছেন।’
মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘আচরণবিধিমালা সম্পর্কে যাতে কোনো প্রকার বিভ্রান্তির অবকাশ না থাকে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ একটি পরিপত্র জারি করা অত্যাবশ্যক। তা না হলে এসব বিভ্রান্তি সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আসন্ন সিটি নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে না পারলে নির্বাচন কমিশন আস্থার সংকটে পড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনের প্রচার বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদার পদে থাকা ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। তবে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে ভোট দিতে পারবেন।
ইসি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই বিধিমালায় এ বিধান যুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে কাজী রকিবউদ্দীন কমিশনের সময়ে এ বিধি পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। বর্তমান কমিশনের সময়ও ২০১৮ সালের চার সিটি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এ বিধি পাল্টানোর দাবি তুলেছিল।
মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, সংসদ সদস্যরা ঘরোয়াভাবে বা বাইরে নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো সমন্বয়ের কাজ করতে পারবেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোট চাওয়া ও প্রচার চালানো ছাড়া সংসদ সদস্যরা সবই করতে পারেন। তার মন্তব্য হলো, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে পারবেন। তার মনোনীত প্রার্থীর বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে পারবেন, তবে ভোট চাইতে পারবেন না। তবে দলের অন্যরা ভোট চাইতে ও প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না।
- ক্যাসিনোকাণ্ড: দুই ভাই এনামুল ও রূপন গ্রেফতার
- রেমিট্যান্স : ৬ মাসে প্রবাসীরা পেলেন ১৪২৭ কোটি টাকা প্রণোদনা
প্রসঙ্গত, আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মেয়ারপ্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। এমনটি মনে করেন ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’- এমন অভিযোগের জবাবে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। বিরোধী পক্ষকে বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিরোধী পক্ষ মিথ্যাচার করছে। অতীতেও তারা মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।