আজকে সব জায়গায় ভয় : ফখরুল

মত ও পথ প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দায়িত্বে যেসব কর্মকর্তারা আছেন তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার দাবি, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন দাবি করেন।

universel cardiac hospital

ফখরুল বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু আমরা জানি। কে গাড়ির অনুমোদন নেয়ার জন্য ফাইল বদল নিয়ে মন্ত্রীর কাছে গেছেন, কারা নিজের স্কুল পারমিশন নেয়ার জন্য সরকারি জমি নিয়েছেন- এসব খবর আমাদের কাছে আছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, তারপরে দেখা যাচ্ছে এ মানুষগুলোকে যাদের কোনো মোর‌্যালিটি (নীতি) নেই, তাদেরকে নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে দিয়েই আবার নতুন যে যন্ত্র তৈরি করেছে ইভিএম মেশিন, যে মেশিন পৃথিবীর সমস্ত দেশে রিজেক্টেড (বাতিল) হয়ে যাচ্ছে, সেই মেশিন কখনোই ভোটারের যে ইচ্ছা, যে সেখানে ভোট দিতে যায়, তার প্রতিফলন না ঘটানোর মতো যথেষ্ট কৌশলের মধ্যে রয়েছে। এটাকে ম্যানুপুলেট (কারসাজি) করা যায়।

গুম হওয়া পরিবারের সন্তানদের বৃত্তি:

‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’- এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে বিগত আন্দোলনের সময় গুম, হত্যা, পঙ্গু হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এতে গুম হওয়া ১০ পরিবারের সদস্যদের হাতে শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমরা এই আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি। আওয়ামী লীগ যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে সংগ্রাম করেছিল, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছিল, তারাই স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে দানবে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পরে তারা একইভাবে শুধু খোলসটা পাল্টিয়ে দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে তাদের একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে, নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যে তারা সংবিধান সংশোধন করেছে। যারা এর প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন, রাজপথে নেমে এসেছিলেন তারা আজকে অনেকে আজকে আমাদের মাঝে নেই। তাদের অনেককে এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স (গুম) করা হয়েছে।

ফখরুল বলেন, আজকে শিশুরা এখানে আছে। ওরা প্রতি মুহূর্তে ভাবে যে, তার বাবা ফিরে আসবে, আসে না। মা আছেন ভাবেন যে, এই বোধহয় ছেলে দরজা নক করল, আসে না। স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকে কখন তার প্রিয় মানুষটা পাশে আসবে। এই পরিস্থিতি একটা অসহনীয় একটা পরিবেশ, একটা দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন পত্রিকায় দেখবেন একটা হত্যার মহোৎসব চলছে। আজকে একটা মারাত্মক খবর দেখলাম, মহাসড়কে মানুষের শরীরের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ৩/৪ বছরের শিশুকে পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে।

মিডিয়ায় সেলফ সেন্সরশিপ:

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সব জায়গায় ভয়। এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা যারা আজকে এখানে খবর নিচ্ছেন, ছবি তুলছেন তারা নিজেরাই সেন্সরশিপ আরোপ করছেন। তাদের ম্যানেজমেন্ট নিজেরাই করছেন। সরকার বলে বলেই তারা (মিডিয়া) নিজেরাই সেন্সরশিপ করেন- এটা দেয়া যাবেন না, ওটা দেয়া যাবে না, এই খবর ছাপানো যাবে না।

এ সময় তিনি চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচন, ইভিএম, গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন।

ইভিএমের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, আমরা এর বিরোধিতা করেছি। আমরা বলেছি যে, ইভিএম দিয়ে কখনোই মানুষের যে রায়, তার প্রতিফলন হবে না। আমরা এখনও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর বিরোধিতা করছি।

সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, তারা আজকে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা সেজন্য বলি, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণত হতে চলেছে। তারপরও বলি, হতাশ হবেন না, ছেড়ে দেবেন না। নেভার গিভ-আপ। যত কষ্ট আসুক, যত যন্ত্রণা আসুক, যত অত্যাচার-লাঞ্ছনা আসুক, এ দেশের মানুষ বার বার উঠে দাঁড়িয়েছে, তরুণরা উঠে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবে, দাঁড়াচ্ছে। সব জায়গায় প্রতিরোধ হচ্ছে, প্রতিরোধ হবে।

 সংগঠনটির সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, সাবেক ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শফিউল বারী বাবু, মামুন হাসান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, হেল্প সেলের নাসির উদ্দিন শাওন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে