ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোটের মাঠ চষে বেড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।
প্রতিশ্রুতির বার্তা নিয়ে দ্বারে দ্বারে যাওয়ার সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ব্যস্ত তারা।
১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেন্দ্রিক বড় রকমের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যক্তিগত ফেইসবুক পাতা থেকে জনসংযোগের লাইভ সম্প্রচার থেকে শুরু করে বহু রকম ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমের নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরার চেষ্টায় আছেন প্রার্থীরা।
নিউজ শেয়ার দিয়ে, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন প্রার্থীদের সোশাল মিডিয়া টিমের সদস্যরা।
প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামের রয়েছে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, প্রথমবার মেয়র নির্বাচনের সময় সেটি চালু হয়েছিল।
নৌকার আতিকের মতো বিএনপির তাবিথ আউয়ালও ব্যক্তিগত ফেইসবুক পাতা সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন জনসংযোগ সরাসরি সম্প্রচারে।
নয় মাসে মেয়র আতিকের কর্মকাণ্ড, এবার নির্বাচনী ইশতেহারের মূল বিষয় এবং প্রার্থীদের তুলনামূলক চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছে আতিকের প্রচার শিবির।
ঢাকা উত্তরে নৌকার প্রার্থী মিডিয়া সমন্বয়ক জয়দেব নন্দী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রচারের পোস্টার, ভিডিও, থিম সং, গানের ভিডিও আমরা তুলে ধরছি। পাশাপাশি প্রার্থী যেখানে গণসংযোগে যাচ্ছেন বা জনসমাগমে বক্তব্য দিচ্ছেন আমরা সেটা লাইভ করছি।
তিনি বলেন, মূলত তিন ভাগে আমরা ভিডিও কনটেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করছি। এক্ষেত্রে প্রার্থী যেহেতু গত নয় মাস মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন, সেহেতু তার এই সময়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে। আগামী সময়ের জন্য যে ইশতেহার দিবেন, তার ’কি পয়েন্টস’ আমরা তুলে ধরব।
জয়দেব নন্দী বলেন, এগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তুলনামূলক অবস্থার তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনও তৈরির করা হচ্ছে।
আচরণবিধির বিষয় মাথায় রেখে মেয়র প্রার্থীর ব্যক্তিগত ফেইসবুক পাতার বাইরে অন্যান্য পাতায় ভিডিওগুলো শেয়ারের কথা জানান জয়দেব নন্দী।
অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার, ব্যানারের পুরনো ধারার সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও কর্মকাণ্ড পরিচালনাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তরুণ রাজনীতিক তাবিথ আউয়াল।
ফেইসবুক-টুইটারের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমরা সরাসরি ভোটারদের কাছে পৌঁছে যেতে পারি। ডিজিটাল মিডিয়াকে অন্যভাবে ব্যবহার করব। আগে প্রার্থীরা বলতেন, ভোটাররা শুনতেন। এবার আমরা ভোটারদের অভিযোগ শুনব, পরামর্শ শুনব, যেন ক্যাম্পেইনের শেষে জনগণের ইশতেহার তৈরি করতে পারি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের ফেইসবুক পাতা থেকে মাঠের প্রচারণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি অনলাইন পোস্টার ও অনেক ধরনের ভিডিও কনটেন্ট প্রকাশ করা হচ্ছে।
তাপসের জীবনী তুলে ধরার পাশাপাশি শর্টফিল্মের আকারে তুলে ধরতে দেখা গেছে তার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণে নৌকার প্রার্থীর ক্যাম্পেইন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, প্রার্থীদের গণসংযোগ, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সতস্ফুর্ততাসহ নানা বিষয় আমরা দলীয় ও ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি ও পেইজের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছি।
মাঠের প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইভাগে প্রচার চালানোর কথা জানান ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স।
বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ২০ তারিখ পর্যন্ত একভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছি আমরা। ২১ তারিখ থেকে সেটা আরও জোরদার করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইশরাকের ফেইসবুক পাতা থেকে আমরা দুইটা ভিডিও প্রকাশ করেছি। প্রতিদিন প্রচারণার উপর ভিত্তি করে রাতে ভিডিও আপ করা হচ্ছে। ২১ তারিখের পর সেগুলো আরও বাড়বে।
ইশরাকের পাতার বাইরেও ফেইসবুকে অন্যান্য পাতা এবং ইউটিউবে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে প্রকাশ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ইমরান সালেহ বলেন, ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নগরবাসীর কাছে যেতে চাচ্ছি আমরা। প্রচারে আমাদের যে মিডিয়া সেল আছে, সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া উপ-কমিটিও রয়েছে আমাদের।
প্রার্থীর বাইরে অনেকগুলো ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘একযোগে একই বিষয়ে’ পোস্ট দিয়ে প্রার্থীর বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তরে সিপিবির প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হকের নির্বাচন পরিচালনায় মিডিয়া সেলের প্রধান খান আসাদুজ্জামান মাসুম।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সামর্থ অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রার্থীর প্রচারণার নানাদিক, আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে ছোট ছোট ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা, প্রচারপত্র ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছি।
বিধিতে নেই কিছু
সনাতন পদ্ধতির ভোটের প্রচার কেমন হবে, সে বিষয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধিতে স্পষ্ট করা থাকলেও ইন্টারনেটে প্রচারের বিষয়ে কিছু নেই বিধিতে।
আচরণবিধিতে তা না থাকায় দ্রুত করণীয় ঠিক করতে কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও দল নিয়ে বিদ্বেষমূলক ও অপপ্রচার ঠেকাতে বিশেষ নজরদারির কথা ভাবা হচ্ছে।
শিগগির আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে উত্তরের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব আবুল কাসেম জানান, আইনের মধ্যে থেকে প্রচারণা চালাতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয় বিদ্যমান আচরণবিধিতে নেই।
তিনি বলেন, সোশাল মিডিয়ায় প্রচারণার বিষয়টি কমিশনে উপস্থাপন করব। সীমাবদ্ধতা থাকলেও বিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক কোনো বক্তব্য দিলে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। সোশাল মিডিয়ায় বিষয়টি কীভাবে মনিটরিং করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নজরদারির কথা বলেছেন দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব আব্দুল বাতেনও।
তিনি বলেন, সোশাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালাতে বিধি-নিষেধ নেই এখনও। প্রচারের সময় শুরুর পর প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনেই তা করতে হবে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, দল বা তাদের সমর্থক কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক, উস্কানিমূলক বা আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়- এমন কিছু করলে তা নজরদারি করা হবে।
নির্বাহী হাকিম ভোটের মাঠে আচরণবিধি তদারকিতে থাকবেন। কোনো অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় অপপ্রচার ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি করে। সে সময় টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে ইসি সচিবালয়।