বিশ্বের নির্ধারিত ৬৪ দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতি ঘণ্টায় পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি আয় করেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাছাড়া মাসিক আয়ের ক্ষেত্রেও এই ব্যবধান অত্যন্ত কম। দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মাসিক আয় মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ কম।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এটাকে অনেক ভালো পরিস্থিতি হিসেবেই দেখা যায়। পুরো বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিকের ব্যবধান সবচেয়ে কম।
গত ১৬ জানুয়ারি জাতিসংঘের ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাবনা ২০২০’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শ্রমিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, পার্ট-টাইম/ফুল-টাইম চাকরি, সরকারি/বেসরকারি চাকরি প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এই জরিপ চালানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘণ্টা হিসেবে একই কাজে পুরুষদের তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি পারিশ্রমিক পান, যা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের মতো উচ্চ-আয়ের দেশের চেয়েও বেশি।
প্রতিবেদনটিতে ৬৪ দেশে নারী-পুরুষের মাসিক ও প্রতি ঘণ্টার আয়ের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৮-১৯ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিশ্ব পারিশ্রমিক প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
- স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যার পর যুবকের আত্মহত্যা
- আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের বিষয়েও বলা হয়েছে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে পাঁচ নম্বরেই রয়েছে লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন।
মাসিক আয়ের পার্থক্য কমেছে
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আইএলও’র প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি ঘণ্টায় নারীরা পুরুষদের চেয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি আয় করেন। তবে মাসিক হিসাবে পুরুষদের আয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। জাতিসংঘের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে নারী-পুরুষের পারিশ্রমিক ব্যবধান কমেছে অন্তত ৫ পয়েন্ট। সে হিসাবে মাত্র এক বছরেই বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে।
বিশ্বের চিত্র সন্তোষজনক নয়
বৈশ্বিক হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় নারীদের আয় পুরুষদের চেয়ে গড়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ কম। মাসিক আয়ের ক্ষেত্রে এর অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে নারীরা পুরুষদের চেয়ে গড়ে ২১ দশমিক ২ শতাংশ কম পারিশ্রমিক পান।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের আইএলওর ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় নারীরা পুরুষদের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ কম আয় করতেন, আর মাসিক আয় কম ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। এ থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী গত এক বছরে লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিক ব্যবধান বেড়েছে।
ব্যবধান বেড়েছে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে
জাতিসংঘের চোখে পারিশ্রমিকে নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে ১৭টি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে। জরিপের জন্য নির্বাচিত ৩০টি উচ্চ আয়ের দেশে মাসিক পারিশ্রমিক ব্যবধান সবচেয়ে কম। তবে আশ্চর্যজনকভাবে পাঁচটি নিম্ন আয়ের দেশও এক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো করেছে। প্রতি ঘণ্টার আয় ব্যবধানও এই পাঁচটি দেশে সর্বনিম্ন।
উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ঘণ্টার আয় ব্যবধান ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মাসিক আয় ব্যবধান ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ঘণ্টার আয় ব্যবধান ১২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মাসিক আয় ব্যবধান ২০ দশমিক ২ শতাংশ।
তলানিতে পাকিস্তান
নারী-পুরুষের পারিশ্রমিকে ঘণ্টা আর মাসিক উভয় ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় ব্যবধান পাকিস্তানে। দেশটির নারীরা প্রতি ঘণ্টায় পুরুষদের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ কম পারিশ্রমিক পান। আর একই কাজ করেও মাসিক আয়ে পুরুষদের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যবধানে পিছিয়ে নারীরা। পাকিস্তানে মাসিক আয়ের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিক ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
খারাপ অবস্থার দিক দিয়ে পাকিস্তানের পরেই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে ঘণ্টা হিসাবে ব্যবধান ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ আর মাসিক হিসাবে ব্যবধান ৩১ দশমিক ১ শতাংশ।
উচ্চ আয়ের দেশ হয়েও এই তালিকার তিনে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে ঘণ্টা হিসাবে নারীরা পুরুষদের তুলনায় পারিশ্রমিক কম পান ২৬ দশমিক ২ শতাংশ আর মাসিক হিসেবে এই ব্যবধান ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা
ওই জরিপে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ছাড়াও নির্বাচিত ছিল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। তবে সেখানে জায়গা হয়নি ভারতের। শ্রীলঙ্কায় লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিক ব্যবধান বেশ চড়া, সেক্ষেত্রে নেপালের অবস্থান যথেষ্ট ভালো। তবে একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই ব্যবধান বিশ্বের গড় ব্যবধানের চেয়ে বেশি।
হিসাব পদ্ধতিআই
এলওর সংজ্ঞা অনুসারে, একজন ব্যক্তির নিয়মিত মজুরি, বোনাস, উপহার, বার্ষিক ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি, অর্জিত ছুটি সবকিছু মিলিয়ে মোট সম্মানী হিসাব করে আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।