দেশের বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুরুল ইসলাম দিপুকে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব পদ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে টঙ্গীবাসী।
গত শুক্রবার জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ১৪ জন যুগ্ম মহাসচিবের নাম ঘোষণা করেন। এই তালিকার তিন নম্বরে রয়েছে গাজীপুরের নুরুল ইসলাম দিপুর নাম।
২০০৪ সালের ৭ মে প্রকাশ্য দিবালোকে শ্রমিকনেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যার পর ইউরোপে পালিয়ে যান দিপু। বিদেশে পালিয়ে থেকে এত দিন তিনি জাতীয় পার্টির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন কমিটিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই ফেরারি আসামিকে।
দিপুকে গ্রেপ্তার ও জাপার পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে আগামীকাল সোমবার ও পরদিন মঙ্গলবার (২০ ও ২১ জানুয়ারি) বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে টঙ্গী থানা ও টঙ্গী সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি কানন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান সরকার বাবু এ তথ্য জানান।
টঙ্গী সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী মন্জুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম জানান, মঙ্গলবার টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করবেন। বিক্ষোভ শেষে তারা প্রতিবাদ সভা করবেন।
এদিকে, প্রকাশ্যে রাজনীতিতে এলেও আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আসামি ও জাপা নেতা নূরুল ইসলাম দিপুকে খুঁজে পাচ্ছে না ইন্টারপোল। বেলজিয়াম, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাতীয় পার্টি এবং সামাজিক নানা কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট রয়েছে। রেড অ্যালার্ট রয়েছে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আরেক আসামি সৈয়দ আহম্মেদ মজনুর বিরুদ্ধেও। প্রায় ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও ইন্টারপোল দিপু কিংবা মজনুর অবস্থান এখনো শনাক্ত করতে পারেনি!
মজনুর অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও দিপু যে ইউরোপের কোনো এক দেশে আছেন তার কিছু তথ্য-প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। অনলাইন গণমাধ্যমেও দিপুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সচিত্র খবর প্রকাশিত হচ্ছে মাঝেমধ্যে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দিপু ও মজনুকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সর্বশেষ অবস্থান ও ইন্টারপোলের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৭ মে বিএনপি-জোট সরকারের আমলে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় গাজীপুর-২ আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের জনপ্রিয় নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় খুন হন ওমর ফারুক রতন নামে আর একজন।
ঘটনার পরদিন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দিপুসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বাদি মতিউর রহমান বলেন, আহসান উল্লাহ মাস্টারের পলাতক খুনি দিপুকে পদ দিয়ে জাতীয় পার্টি চিহ্নিত একজন অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। দিপুকে অবিলম্বে জাতীয় পার্টির সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। পাশাপাশি তিনি ইন্টারপোলের সাহায্যে দিপুকে দেশে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
জানা গেছে, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের পরপরই ইউরোপে পাড়ি জমান নুরুল ইসলাম দিপু। তিনি বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে নুরুল ইসলাম দিপুসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান অন্য দুজন। ২০০৯ সালে দিপুসহ বিদেশে পলাতক আরেক আসামি মজনুকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। আসামিদের হাইকোর্টে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৫ জুন উচ্চ আদালত রায়ে নুরুল ইসলাম দিপুসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। যাবজ্জীবন দেন সৈয়দ আহাম্মেদ মজনুসহ আটজনকে।
- নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে কাজ করছে বিএনপি : ওবায়দুল কাদের
- ভোটের জন্য পেছাল গ্রন্থমেলা, উদ্বোধন ২ ফেব্রুয়ারি
উচ্চ আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রায়ের এক সপ্তাহের মাথায় ইউরোপে পলাতক নুরুল ইসলাম দিপুকে জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে মনোনয়ন দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এখন নতুন কমিটিতে একই পদে বহাল রাখেন জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়াম্যান জি এম কাদের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে গাজীপুর-২ (টঙ্গী গাজীপুর নিয়ে গঠিত) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুর পর ওই আসনে উপনির্বাচনে ২০০৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তার ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল। পরপর তিনবার নির্বাচিত রাসেল এখন সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।