অপরাধের শাস্তি নিয়ে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারাগারে জীবন কাটাতে হয় কয়েদিদের। তবে ‘প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার, কারাগার হবে সংশোধনাগার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে কারাবন্দিদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্যের লাভের অর্ধেক পাচ্ছেন কারাবন্দিরা। বাকি অর্ধেক যায় সরকারি কোষাগারে।
বন্দিদের দিয়ে বানানো এসব পণ্য কারাগারের কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্রে বছরজুড়েই পাওয়া যায়। ২০১৮ সাল থেকে কয়েদিদের দিয়ে বানানো এসব পণ্য ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৩ নম্বর মিনি প্যাভিলিয়নে জেলখানায় বানানো এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
কাঠের তৈরি সিংহাসন, নৌকা, বেতের মোড়া, প্লাস্টিকের মোড়া, সুতি তোয়ালে, টি-শার্ট, লুঙ্গি, গামছা, শাড়ি, বিছানার চাদর, থ্রিপিস ও পুঁতির কলমদানিসহ কাঠ ও প্লাস্টিকের তৈরি প্রায় ২০০ ধরনের কারুপণ্য পাওয়া যাচ্ছে এ প্যাভিলিয়নে। ক্রেতাদের মাঝে এসব পণ্যের চাহিদাও বেশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারাগারে উৎপাদিত পণ্যে মুগ্ধ ক্রেতারা। চাহিদানুযায়ী পণ্য দিতেই পারছেন না তারা।
আজ বুধবার বাণিজ্য মেলার কারা প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় রয়েছে। ঢাকার মুগদা থেকে আসা আকিমুন বেগম নামের এক ক্রেতা খুব মনোযোগ দিয়ে মোড়াসহ অন্যান্য জিনিস দেখছেন। দেখে পছন্দ হওয়ার পর ৬০০ টাকা দামের একটি বেতের মোড়া কেনেন।
কারাপণ্য কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় একটা মোড়ার প্রয়োজন ছিল। এখানে এসে পছন্দ হলো তাই কিনে ফেললাম।
প্যাভিলিয়নের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে মোড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকায়। চেয়ার আকৃতির বড় মোড়ার দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা, পুঁথির কারুকাজে ভরা মেয়েদের হাতের ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৬০০ টাকায়, লুঙ্গি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, গামছা ৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, জামদানি শাড়ি চার হাজার টাকা, সাধারণ সুতি শাড়ি এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, হাতের কাজ করা বিভিন্ন ধরনের কাঁথা দুই হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা, বিছানার চাদর দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।
- শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় সৈকতে বঙ্গবন্ধুর হাজার ছবির ব্যানার
- পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
এবারের মেলায় কারাগারে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার ও প্যাভিলিয়নের সহকারী ম্যানেজার ওয়ারেশ বলেন, মেলায় এসব পণ্যের চাহিদা প্রচুর। আমরা চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ করতে পারছি না।
তিনি বলেন, কারাবন্দিদের নিপুণ হাতের সূক্ষ্ম কাজ আর কাঁচামাল উন্নতমানের হওয়ায় এসব পণ্যের গুণগত মান বেশ ভালো, তাই চাহিদাও প্রচুর। এসব পণ্য বিক্রি করে যে লাভ হয় তার অর্ধেক পাচ্ছেন কারাবন্দিরা, বাকি অর্ধেক সরকারি কোষাগারে জমা হয়।