ব্যাংকের সাড়ে ৩ কোটি টাকা ‘অনলাইন জুয়ায় ঢেলেছেন’ কর্মকর্তা!

রাজশাহী প্রতিনিধি

শামসুল ইসলাম ফয়সাল
ছবি : সংগৃহিত

প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ক্যাশ ইনচার্জ হিসেবে ভল্ট সামলানোর দায়িত্বে থেকে তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। ওই টাকা তিনি ‘অনলাইন জুয়ায়’ হেরেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলেছেন।

শামসুল ইসলাম ফয়সাল নামে ব্যাংকটির সিনিয়র অফিসার পদের এই কর্মকর্তা বুধবার রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

মহানগর হাকিম মো. সাদেকীন হাবীব বাপ্পী বিকালে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেন বলে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভল্ট থেকে তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে জুয়া খেলার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ফয়সাল।

ওসি জানান, গত ২৩ জানুয়ারি ভল্টের সব টাকা গোনার পর ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কম পাওয়া যায়। তখন ফয়সাল টাকা ‘সরানোর কথা স্বীকার করেন’। প্রথমে তিনি বলেন, টাকাগুলো তার দুই বন্ধুকে এবং তার ব্যবসার একটি প্রকল্পের কিস্তি দিয়েছিলেন। টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চান তিনি। তবে তার কথায় সন্দেহ হলে রাত ১২টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এরপর প্রিমিয়ার ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার সেলিম রেজা খান বাদী হয়ে ওই থানায় ফয়সালের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফয়সালকে তিন দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ, যা শেষ হয়েছে বুধবার।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল প্রথমে ওই টাকা দিয়ে নিজের নামে ‘সুবর্ণভূমি আবাসিক এলাকায়’ প্লট কেনা এবং বাকি টাকা দুই বন্ধুকে ধার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন যে, প্রায় দুই বছর আগে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম বেট৩৬৫-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুয়াড়ি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা নিয়ে তিনি জুয়া খেলে হেরেছেন।

গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ফয়সাল পুলিশকে বলেছেন, জুয়া খেলতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে তিনি টাকা চুরি করেন। ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ভল্টে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকত। ভল্টের সামনের টাকার লাইন ঠিক রেখে পেছনের লাইন থেকে তিনি টাকাগুলো সরাতেন। এতে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার সন্দেহ হতো না। ক্যাশ ইনচার্জ হিসেবে তিনিই দৈনিক টাকার হিসাব রাখতেন। খাতা-কলমে টাকার কোনো গড়মিল ছিল না।

এদিকে টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ আলমের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম রাজশাহী পৌঁছেছে। তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান শাহ্ আলম বলেন, এই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফয়সাল একাই নাকি ব্যাংকের আরও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভল্টে টাকা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তত দুইজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। এক্ষেত্রে কী হয়েছে, তাও দেখা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে