বাংলার চর্চায় ঘাটতির দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না: ড. আনিসুজ্জামান

মত ও পথ রিপোর্ট

ড. আনিসুজ্জামান
ফাইল ছবি

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর বইমেলা এলেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠে। আলোচনা হয় সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার শুরু না করতে পারার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়েও। তবে এ বিষয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের স্পষ্ট কথা, ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা নিয়ে গর্ব হওয়ার কথা। কিন্তু এই চর্চায় ঘাটতি আছে, যার দায় রাষ্ট্র-সমাজ এড়াতে পারে না।’

বইমেলা উপলক্ষে গণমাধ্যমকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় আনিসুজ্জামান এ কথা বলেন।

universel cardiac hospital

এবারের বইমেলা বিশেষ একটি সময়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি বড় আয়োজন হচ্ছে, যার রাজনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করি। আসছে ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আর এরপরেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই দুটি আয়োজন বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয়। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির আবেগের প্রকাশ পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

খ্যাতিমান এই শিক্ষাবিদ বলেন, দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর বইমেলার আজ পরিপূর্ণ রূপায়ন ঘটেছে। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জায়গা নিয়ে এখন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বইপ্রেমী মানুষেরা মেলায় এসে আনন্দ-নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। শত শত স্টল। শত শত লেখকের বই। আর এমন একটি মেলাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতিকে সংযুক্ত করার ইতিহাস আপনি অন্য দেশে পাবেন না।

তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে, মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা আসলে ভাষা-সাহিত্যকে নিয়ে কোথায় যেতে পারলাম? বাংলা সাহিত্য নিয়ে অহংকার করার কথা। এক সময় তাই ছিল। সাহিত্য চর্চা, ভাষার চর্চা নিয়ে গর্ব হওয়ার কথা। কিন্তু এই চর্চায় ঘাটতি আছে, যার দায় রাষ্ট্র-সমাজ এড়াতে পারে না।

জাতীয় এ অধ্যাপক স্মরণ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলা একাডেমিতে শহীদ দিবস (ভাষা শহীদ দিবস) উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু। ওই অনুষ্ঠানে তিনি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর ব্যাপারে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তার দল ক্ষমতায় এলে শুরুতেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা হবে। তিনি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর জন্য কীভাবে বাংলা পরিভাষা তৈরি করা হবে সে বিষয়েও পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাষা-সংস্কৃতির চর্চায় শৈথিল্য চলে আসে। কিন্তু স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও এই বিষয়ে উদাসীন বলে মনে করি। আমরা বারবার তাগিদ দিয়ে এসেছি, জাতিসত্তার বিকাশে সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। অথচ রাষ্ট্র-সরকার সেটা করেনি।

তিনি আরও বলেন, ‘মুজিববর্ষের বইমেলা উপলক্ষেই আওয়াজ উঠুক, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে