বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বড় পরিসরে এবারের অমর একুশে বইমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অমর একুশে বইমেলা ২০২০

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে উৎসর্গ করে বড় পরিসরে এবারের অমর একুশে বইমেলা ২০২০ আয়োজন করা হয়েছে। গতবারের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী মেলা চলবে। ২ ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির সাহিত্য বিশারদ আদ্বুল করিম মিলনায়তনে এবারের বইমেলার বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অমর একুশে মেলা ২০২০ এর সদস্য সচিব ও আহ্বায়ক ড. জালাল আহমেদ।

বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজি, একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেন, মেলার পৃষ্ঠপোষক বিকাশের সিএমও নওবত আলী এবং মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ক্রসওয়াক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মারুফ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে ড. জালাল আহমেদ বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০। বেলা তিনটায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি মেলা পরিদর্শনে যাবেন।

তিনি বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু রচিত তৃতীয় বই বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আমার দেখা নয়া চীন-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গ্রন্থমেলা উন্মোচন করবেন।

ড. জালাল জানান, গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিট, মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজি বলেন, এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণ। সেখানে ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৬টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেয়া হয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করেছেন তাঁদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।

তিনি জানান, একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ২টি, একাডেমির শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার শিশু চত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এছাড়া মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে-পশ্চিম পাশে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে।

গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের মোট ৬টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।

গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২৫টি নতুন বই নিয়ে আলোচনা করা হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী একুশে বক্তৃতা। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই রয়েছে কবিকন্ঠে কবিতাপাঠ এবং আবৃত্তি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।

বাংলা একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেন জানান, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৯ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

এছাড়া ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘ রোকনুজ্জামান দাদা ভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।

এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৪টি বই।

মেলায় নতুন সংযোজন

প্রতিবারের নিয়মিত বিভিন্ন দিক ছাড়া এবার মেলায় অনেক নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। যেমন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেলার আবেদনপত্র বিতরণ-গ্রহণ এবং অনলাইনে ভাড়ার অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এবার নতুন থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। গ্রন্থমেলা বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে মেলার আঙ্গিক ও সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে অনেক স্থাপনা করা হয়েছে। মেলার বিভিন্ন অংশ বঙ্গবন্ধুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে তাঁর জীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটে ওঠে। মেলার উভয় অংশে তিনটি তথ্যকেন্দ্রে থাকবে। দুটি সোহরাওয়ার্দীতে ও একটি একাডেমি প্রাঙ্গণে। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ এবার বর্ধিত পরিসরে স্থাপন করা হয়েছে।

শিশু চত্বর বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। শিশুপ্রহরের দিনগুলোতে ‘তারুণ্যের বই’ ব্যানারে শিশু-কিশোরদের বই পাঠে উৎসাহিত করা হবে।

নামাজ ঘর ও টয়লেট ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও উন্নত করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য সম্প্রসারিত নামাজ ঘর থাকবে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাছে একটি ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকবে। প্রতি বছরের মতো এবারও হুইল চেয়ার সেবা থাকবে। তবে গতবারের চেয়ে বেশি সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এবার হুইল চেয়ারের সংখ্যা বাড়বে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি ফুডকোর্ট থাকবে।

বইমেলার সময়সূচি

বইমেলা ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেলা চলবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে