প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টাইন (পৃথক করে রাখা) মেয়াদ শেষ হয়েছে। শনিবার রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে তাদের সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর রাতে প্রত্যেককে স্বাস্থ্য সনদ ও সংবর্ধনা দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়া শেষে অনেকে রাতেই বাড়ি ফিরেছেন। আবার অনেকে আগামীকাল বাড়ি যাবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সময়কাল শনিবার শেষ হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি তাদের চীন থেকে ফিরিয়ে এনে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য মতে, আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থানকারী ৩০১ জন এবং ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রত্যেককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
উহান থেকে দেশে ফেরার পর ১৪ দিন কোয়েরান্টাইনে থাকার কারণে তাদের মানসিক অবস্থা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ এ আয়োজন করেছে। বাড়ি ফেরার পর কোনো ধরনের জটিলতা অনুভব করলে তাদের আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে বিকাল থেকেই কোয়েরান্টাইন থাকা ব্যক্তিদের বাড়ি নিয়ে যেতে স্বজনরা আশকোনা হজক্যাম্পের সামনে বিকাল থেকেই ভিড় করেন।
নাম, পরিচয় প্রকাশ না করার আহ্বান
কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানিয়েছে আইইডিসিআর। এতে বলা হয়, উহানফেরত যাত্রীদের ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখা সব পক্ষের পেশাগত নৈতিক দায়িত্ব। এ কারণে কোয়ারেন্টাইন সমাপনী কার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়নি।
গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবণ করবেন আশাবদ ব্যক্ত করে বিজ্ঞপ্তিতে স্পর্শকাতর জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবেলয় সাংবাদিক ও সংশ্নিষ্ট মহলকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়।
আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, উহানফেরতদের বিষয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করলে তারা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারে।
তিনি বলেন, হজ ক্যাম্পে কোয়েরান্টাইনে থাকা কারও শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমস্ত গাইডলাইন অনুসরণ করে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর তারা সবাই সুস্থ আছেন। এ কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
দেশে করোনার অস্তিত্ব মেলেনি
এর আগে দুপুরে আইইডিসিআরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক বলেন, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত চার বাংলাদেশির মধ্যে একজন আইসিইউ এবং তিন জন হাসপাতালের আইসোলেশনে আছেন। আরও ছয় বাংলাদেশিকে কোরারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে।
দেশে এ পর্যন্ত করোনা সন্দেহে ৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারও মধ্যে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। বিদেশ থেকে আসা সবাইকে স্ক্রিনিং করা হলেও চীন এবং সিঙ্গাপুর ফেরতদের সর্বোচ্চ নজরে রাখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আইইডিসিআর পরিচালক।