সরকার সিনেপ্লেক্সের টিকিটে প্রযোজকের অংশ নির্ধারণ করবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি

সিনেপ্লেক্সের বিক্রি করা টিকিটে প্রযোজকের অংশ সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

সভায় প্রযোজক-পরিচালক নেতারা জানান, সিনেপ্লেক্সের বিক্রিত টিকিট থেকে তারা তাদের ন্যায্য পাওনা পান না।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, সিনেপ্লেক্সে একটি টিকিট বিক্রি করে ৪৫০ টাকা নেয়া হলে সেখান থেকে প্রযোজককে মাত্র ৫৫ টাকা দেয়া হয়। আর হলে ২৫০ টাকার টিকিট থেকে ৩৩ টাকা, ২০০ টাকার টিকিট থেকে ১৭ টাকা এবং ১৬০ টাকার টিকিট থেকে ১৩ টাকা প্রযোজক পান।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, দেশীয় ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রযোজক ছবি না বানালে তার খরচ থাকে না, কিন্তু হলে সিনেমা না চললেও প্রতিদিনই খরচ হয়।

হলে বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নেয়া হয় জানিয়ে সুদীপ্ত বলেন, বিকেল ৫টার পর সেই বিল আরও বেড়ে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানিতে এনবিআর ট্যাক্স ধার্য করে রেখেছে।

হলগুলোতে টিকিট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তা থেকে সরকারের ট্যাক্স বাদ দিয়ে সিনেমা হল মালিক ও প্রযোজক যাতে সমান ভাগ পান তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আগে বলতাম প্রযোজক বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে, এখন বলছি হল বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে। দেশে এক হাজার ৩০০ সিনেমা হল ছিল। গতবার ১৭০টি হলে চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়া গেছে। এবার ৮০টির ওপর হল খুঁজে পাইনি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হলেও এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না।

তথ্যমন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বলছেন সিনেমা হল থেকে প্রযোজকরা টাকা পায় না। প্রথম দিকে আমরা সিনেপ্লেক্সগুলোতে একটা পারর্সেন্টেজ নির্ধারণ করে দিতে পারি। পরবর্তী ধাপে আমরা সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলে যাই। সিনেপ্লেক্সে টিকিটের দাম কোনো জায়গায়ই ৩০০ টাকার কম নয়। সেখান থেকে প্রযোজক মাত্র ৩০ টাকা পাবেন, এটা হওয়া উচিত নয়।

হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা বাণিজ্য, শিল্প ও এনবিআরকে নিয়ে একটি যৌথ মিটিং ডেকে একটা নির্দেশনা খুব সহসা জারি করতে পারব বলে আশা করছি।

মন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে চলচ্চিত্রের বিশেষ করে সিনেমা হলের যে অবস্থা! অনেকগুলো হল বন্ধ হয়ে গেছে। হল না থাকলে তো চলচ্চিত্র বাঁচবে না। কারণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মূল মাধ্যম হচ্ছে হল।

তিনি বলেন, প্রযোজকদের অসুবিধা হচ্ছে, একটি ছবি যখন তারা নির্মাণ করেন তখন টাকা উঠে আসে না। অর্থাৎ বহুমুখী সমস্যা এখানে। আমরা চেষ্টা করছি প্রথম থেকেই কিন্তু আমাদের একক চেষ্টায় সবকিছু হয় না। এখানে আরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যুক্ত। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত সবাই আমাদের মতো করে বিষয়টি উপলব্ধিও করে না। এসব কারণে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি। সেটি হচ্ছে, আগে অনুদান দেয়া হতো ৫ কোটি টাকা, এ বছর থেকে সেটা হচ্ছে ১০ কোটি টাকা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা নীতিমালা পরিবর্তন করতে যাচ্ছি, প্রায় চূড়ান্ত। সেটি হচ্ছে- অনুদানে যে ছবিগুলো বানানো হবে, তা হলে মুক্তি দিতে হবে। আগে হতো কী, অনুদানের ছবি হলে মুক্তি দিতো না, আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিতো। হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ হচ্ছে, হল ছবি পাচ্ছে না।

চলচ্চিত্র প্রতি অনুদান ৬০ লাখ টাকা থেকে ৭৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ১০ কোটি টাকায় স্বল্প দৈর্ঘ্যসহ অন্তত ১৫-১৬টি অনুদানের ছবি বানাতে পারব। সেগুলো থেকে যদি তিনভাগের ২ ভাগও হলে মুক্তি পায় তাহলে অন্তত ১০টি ছবি হলে মুক্তি পাবে।

নির্দিষ্ট সংখ্যক সিনেমা বোম্বে (মুম্বাই) থেকে আমদানির বিষয়ে পরিচালক ও প্রযোজক সমিতি একমত রয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি এ ব্যাপারে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, এ ব্যাপারে শিল্পী সমিতি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়নি। আমি সব পক্ষের সম্মতি ছাড়া এটা করতে চাই না। অতীতে একবার করা হয়েছিল। সেটা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে।

হল মালিকদের কীভাবে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পুশ করলে ঠিক মতো এগোচ্ছে না। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে হলে কীভাবে কী করা যায় সেটা নিয়ে গতকালও কথা বলেছি। আমরা আশা করছি, যেভাবে লেগে আছি অবশ্যই একটা সমাধানে পৌঁছাতে হবে।

হল মালিকদের কম হারে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে চিঠি দেবেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মালামাল আমদানির ক্ষেত্রে শিল্প হিসেবে সুবিধার জন্য এনবিআরের সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শুধু শিল্প ঘোষণা করলেই এনবিআর ট্যাক্স সুবিধা দিতে পারে না। এক্ষেত্রে এনবিআরের গেজেট নোটিফিকেশনে পরিবর্তন আনতে হবে।

সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল বন্ধ হলেও সিনেপ্লেক্স বাড়ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ঢাকায় ১০-১৫টির বেশি হবে। চট্টগ্রাম শহরেও ৬-৭টি হয়ে যাবে। দেশের অন্যান্য জায়গাতেও হচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠান সারাদেশে ১০০টি সিনেপ্লেক্স করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এক থেকে দুই বছরের মধ্যে যে সংকট সেটা কেটে যাবে। এখন সিনেমার সংকট নেই।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য চলচ্চিত্রকে অতীতের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া নয়, এই চলচ্চিত্র বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করবে এবং বিশ্ব বাজারে স্থান দখল করবে। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে