ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, আমার এবং ফাহিমা খাতুনের একমাত্র কন্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে না, কারণ ইতোমধ্যে সে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে। আমরা এখান থেকে টাকা কামাই করে নিয়ে যাবো এটাও আমাদের আশা না। আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রায় সব সদস্যের সন্তানেরা বিদেশে পড়াশোনা শেষ করেছে কিংবা করছে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় আমাদের জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটা সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কমিটমেন্ট থেকে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছি।
২৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোকতাদির চৌধুরী বলেন, একটা সময় শিক্ষা দীক্ষায় আমরা অনেক এগিয়ে ছিলাম। এই উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলিম ব্যারিস্টারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যিনি তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, এই মাস যাদের রক্তে আমরা পেয়েছি তাদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমাদের এতো কিছু আছে, আমরা দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থান কারও চেয়ে কম ছিল না, অনেক অগ্রসর ছিল। কিন্তু সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া আজ পিছনে পড়ে যাচ্ছে, তাই এটা থেকে উত্তোরণের লক্ষকে সামনে রেখেই আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই, পূর্বে আমাদের যে গৌরবের স্থান ছিল আমরা সেই অবস্থানে ফিরে যেতে চাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা বাংলাদেশে একটি অগ্রগামী জেলা হিসেবে পুনরায় স্থাপন করতে চাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরও বলেন, আমরা শুধু প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে চাই না, আমরা শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রথম হতে চাই। বাংলাদেশের সকল জেলার জন্য আমরা যেন অনুকরণ হতে পারি সেই অবস্থানে যেতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় সেই পথে আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি আমি আশা করছি।
তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ একটি অসাম্প্রদায়িক ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা রেখে যাবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার জন্য যে সোনার মানুষ চেয়ে ছিলেন সেই সোনার মানুষ যাতে আমরা উপহার দিতে পারি সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় সেই পথে হাঁটবে।
সম্মান দেখিয়ে চেয়ার ছেড়ে দিলেন উপমন্ত্রী নওফেল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে থাকা নয়টি চেয়ারের মধ্যে তোয়ালে দেওয়া ঢাকা একটিতে প্রধান অতিথি বসার জন্য নির্ধারণ করা হয়। তবে অনুষ্ঠানের সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে সম্মান দেখিয়ে সেই চেয়ারে বসলেন না তিনি। পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই প্রধান অতিথির পাশের চেয়ারে বসে ছিলেন উপমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠার পরপরই মোকতাদির চৌধুরী প্রধান অতিথির জন্য নির্ধারিত চেয়ারে (অন্য চেয়ারের চেয়ে একটু উঁচু) বসতে মহিবুল হাসানকে অনুরোধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে মহিবুল হাসান ওই চেয়ারে বসার জন্য মোকতাদির চৌধুরীকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনি আমার মুরুব্বী। আপনিই এখানে বসবেন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত উপাচার্য ডা. মো. আনোয়ার হোসেনও এ সময় ব্যারিস্টার নওফেলকে অনুরোধ করলেও তিনি ওই চেয়ারে না বসে পাশের চেয়ারে বসেন।
এদিকে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অদিতি রায় উপমন্ত্রী মহিবুল হাসানকে বক্তব্য রাখার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর সময় তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে শুরু করেন। কিন্তু হাসি দিয়ে অদিতিকে হাতের ইশারায় থামিয়ে বক্তব্য রাখতে মঞ্চের ডায়েসের দিকে চলে আসেন মহিবুল হাসান।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোকতাদির চৌধুরীকে পিতৃতুল্য বলে উল্লেখ করেন মহিবুল হাসান। পরে মোকতাদির চৌধুরী অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে মহিবুল হাসানকে স্নেহ ধন্য ও তাঁর পিতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে শ্রদ্ধেয় নেতা বলে উল্লেখ করেন।
- আরও পড়ুন >> বেনসন-গোল্ডলিফে বিষের ছড়াছড়ি
- আরও পড়ুন >> ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এর অনুমোদন দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী।
এ ছাড়াও প্রশিক্ষিত সন্তানের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করেন উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান।