গ্রন্থমেলার চেয়ে ‘বইমেলা’ শব্দটি বেশি হৃদয়গ্রাহী, চিত্তাকর্ষক, আপন ও সার্বজনীন মনে হয়। এছাড়া দীর্ঘকাল ধরে বইমেলা শব্দটি প্রচলিত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের সময় এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেজন্য আগামী বছর থেকে ‘অমর একুশে বইমেলা’ নামে এ মেলার নামকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।
একইসঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সময়কাল ও দর্শক বিবেচনায় পৃথিবীর বৃহত্তম বইমেলা। মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বইমেলায় প্রায় কোটি দর্শকের আগমন ঘটে। কিন্তু এ দর্শক সংখ্যার আনুষ্ঠানিক কোনো হিসাব নেওয়া হয় না। আগামী অমর একুশে বইমেলা থেকে সঠিক দর্শক সংখ্যা গণনা করে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রন্থমেলা হিসেবে এটিকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই শুধু ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র করেই নয়, বছরব্যাপী লেখালেখির চর্চা হোক এবং মানসম্মত বই প্রকাশিত হোক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেএম খালিদ বলেন, আজ যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি বেদনা এই কারণে যে, প্রাণের মেলায় আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিণী। তবে মেলা শেষ হয়ে এলেও প্রাণে রয়ে যায় প্রাণেরই অনিঃশেষ রেশ। তাই আজ আমরা আনন্দকেই প্রধান করে তুলতে চাইছি।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন পাঠ করেন মেলা আয়োজন কমিটির সদস্য-সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। সব আয়োজনেই কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে; অমর একুশে গ্রন্থমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকব।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. জালাল আহমেদ বলেন, এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকার। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, এবার কমপক্ষে ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। তবে ১৪ ও ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হওয়ায় বিক্রি কম হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। এছাড়া এবার মেলায় প্রকাশিত প্রায় পাঁচ হাজার বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ৭৫১টি।
- চসিক নির্বাচন : দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে একাট্টা হচ্ছে যুবলীগ
- বিএনপি-জামায়াত : সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছেই
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুও হ্রাস পায়নি।
এ সময় অতিথি হিসেবে মূলমঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর, বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী এবং ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মারুফ।