ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে দশবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। বার বার এই প্রকল্পে পরিচালক পরিবর্তনের জন্য যেমন নষ্ট হচ্ছে সময়, ঠিক তেমনি বাড়ছে ব্যয়ের পরিমাণও।
প্রকল্পটিতে বার বার পিডি পরিবর্তনের কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় পাঁচ বছর সময় বাড়াতে হয়েছে। যার ফলে ৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বেশি খরচ বেড়েছে।
এদিকে প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে।
সম্প্রতি আইএমইডি’র সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিয়া সরেজমিনে প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটির পুরো কাজটি ছয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ নম্বর প্যাকেজের কাজ মূল চুক্তির সময় অনুযায়ী হয়েছে। বাকি প্যাকেজগুলোর সময়সীমা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে নির্মিত নতুন সড়কের ১২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার (সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক) পেভমেন্ট খুব ভালো রয়েছে। সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মিত হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দরের মালবাহী গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন বাইপাস দিয়ে চলাচল করায় সাতক্ষীরা শহরে যানজট অনেক কমেছে। অধিকাংশ সড়কে পর্যাপ্ত সফট সোল্ডার আছে। তবে কিছু কিছু সফট সোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত দেখা গেছে।
মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের যানজট দূরীকরণ, বিকল্প সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, ভোমরা বন্দরগামী সড়কের উন্নয়ন এবং ভোমরা বন্দরের কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বার বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে সময়। এর ফলে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়। প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি সব থেকে দুর্বল দিক। ভবিষ্যতে মূল প্রাক্কলিত ব্যয় ও বাস্তবায়ন মেয়াদকালের মধ্যে যাতে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
২০১০ সালের ২৩ জুলাই শ্যামনগর মহাসীন ডিগ্রি কলেজ মাঠের এক জনসভায় সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরে প্রকল্পটি ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে অক্টোবর ২০১০ থেকে জুন ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়।
এ প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্প সমাপ্ত হতে প্রকৃত সময় থেকে পাঁচ বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বার বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার জানান, প্রকল্প পরিচালক মাঠ পর্যায়ে থেকে নিয়োগ হয়। এখানে নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক হন। পরে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হলেন। যার কারণে তিনি হয়তো ওই প্রকল্পে থাকবেন না। আবার একজন অতিরিক্ত প্রকৌশলী বড় কোনো প্রকল্পের পরিচালক হলেন। দেখা গেল তার চাকরির বয়স আছে মাত্র তিন মাস। পরে নতুন করে আবার প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হয়। মূলত এসব কারণেই পরিচালক পরিবর্তন হয়ে থাকে।